খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  চাঁদপুরে মালবাহী জাহাজ থেকে ৭ মরদেহ উদ্ধার ; মুমূর্ষু ১
  ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

কলারোয়া ও দেবহাটা হানাদার মুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আজ ৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার)। সাতক্ষীরার কলারোয়া ও দেবাহাটা উপজেলা পাকহানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা এই দিনে পাকহানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল কলারোয়া ও দেবহাটা। আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। দিবসটি উদযাপনের লক্ষে কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, কলারোয়া এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের অধীন। মহান মুক্তিযুদ্ধেও সময় কলারোয়ায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি বড় ধরনের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে ৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এই সম্মুখযুদ্ধে ২৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। শহীদ হন ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া ১৭ সেপ্টেম্বর কলারোয়ার কাকডাঙ্গার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাকসেনারা কাকডাঙ্গা ঘাঁটি ছাড়তে বাধ্য হয়।

সূত্রমতে, কলারোয়ার ৩৪৩ জন বীর সন্তান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে শহীদ হন ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কলারোয়া অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রবাসী সংগ্রাম পরিষদ। একাত্তরে কলারোয়া এলাকায় পাকবাহিনীর আক্রমণে সর্বপ্রথমে শহীদ হন মাহমুদপুর গ্রামের আফছার সরদার। এরপর এপ্রিলে পাকবাহিনী কলারোয়ার পালপাড়ায় হামলা চালিয়ে গুলি করে হত্যা করে ৯ জন কুম্ভকারকে।

এদিকে এর আগে বীর সন্তানদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে ২৭ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ক্ষেত্র চন্দনপুর এলাকা পাকবাহিনী মুক্ত হয়। কলারোয়ার কপোতাক্ষ নদ তীরবর্তী খোরদো এলাকাও বীর যোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করে পাকবাহিনী মুক্ত করে ফেলেন। কলারোয়ার বীর যোদ্ধাদের লাগাতার সফল অপারেশনের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকহানাদার বাহিনী। একপর্যায় একাত্তরের ৫ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১মিনিটে কলারোয়ার বেত্রবতী নদীর লোহার ব্রিজ মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়ে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা ভোর সোয়া ৫টার দিকে নৌকাযোগে নদী পার হয়ে এসে কলারোয়া বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয়। এভাবে একেকটি সফল অপারেশনের মধ্য দিয়ে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কবল থেকে কলারোয়ার মাটিকে মুক্ত করেছিলেন একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর, আজকের এই দিনে।

যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে কলারোয়া উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৯ টায় শহীদদের গণকবর ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণশেষে দোয়ানুষ্ঠান। পরে সকাল সাড়ে ৯টায় কলারোয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে ৭১’র এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয় পাক বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ক্ষত বিক্ষত সাতক্ষীরার দেবহাটা এলাকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেবহাটা ছিল ৯নং সেক্টরের অধীন। দেবহাটা অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বীর উত্তম প্রয়াত ক্যাপ্টেন শাহাজান মাষ্টার। ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর (অব:) এম.এ জলিল, আর ৯ নম্বর সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টার।

শাহজাহান মাস্টারের নেতৃত্বেই এই অঞ্চলের যুবকেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন দেবহাটা এলাকার খানজিয়া ক্যাম্প, দেবহাটা ক্যাম্প, টাউনশ্রীপুর ক্যাম্প, সখিপুর ক্যাম্প, পারুলিয়া ক্যাম্প, কুলিয়া বাজার ও পুষ্পকাটি ইটের ভাটা সহ বিভিন্ন এলাকায় পাক সেনারা ঘাঁটি গড়ে তোলে।

দেবহাটা এলাকায় টাউনশ্রীপুর ফুটবল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক সেনাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে পাক সেনারা পরাস্ত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা গোলজার নিহত হয়। নিহত হয় বহু পাক সেনা।

এছাড়া ভাতশালাসহ বিভিন্ন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন মরহুম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার। এক পর্যায়ে টাউনশ্রীপুরের সেনা ঘাটির পতন হয়। এভাবে দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয় ও ওঠে বিজয়ের পতাকা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে দেবহাটায় ১১ জন অকুতোভয় বীর যোদ্ধা শহীদ হন। তার মধ্যে অন্যতম লোকমান, গোলজার, কাসেম ও ওহাব প্রমুখ।

দেবহাটা হানাদার মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধ সংসদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!