সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করা হলো কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। বঙ্গবন্ধু ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২-এ ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় ১০ লক্ষের অধিক বাঙালির উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। আজ ৬ ফেব্রুয়ারি তবে সাল ২০২১। সেই ঐতিহাসিক ক্ষণটির স্মরণ করা হলো সেদিনের জায়গাটিতেই। এই অভূতপূর্ব মুহূর্তটি তৈরি করার দায়িত্ব নিলেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বঙ্গবন্ধুর ৬ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক ভাষণের আরও একটি অভিনব মুহূর্ত তৈরি করা হলো আজ ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ।
তাহলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকার জন্য যারা মৈত্রী সম্মাননা পেয়েছিলেন তাদের আবার সংবর্ধনা জানানো হল মাঠে। ১২ জন মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তি মাঠে উপস্থিত ছিলেন ২২ জনের পরিবারের লোক উপস্থিত ছিলেন।
যাদের হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হল তারা হলেন, জাদুকর প্রদীপ চন্দ্র সরকার, সাংবাদিক মানস ঘোষ, সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত, পঙ্কজ সাহা, দিলীপ চক্রবর্তী, মানবাধিকার কর্মী উৎপলা মিশ্রা, অধ্যাপক জিষ্ণু দে ও তার স্ত্রী মীরা দে, প্রণবরঞ্জন রায়, ভাষাবিদ পবিত্র সরকার।
এছাড়া পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় কালজয়ী কবি গোবিন্দ হালদার, কালজয়ী গায়ক মান্না দে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও সাবেক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ রায়, কংগ্রেস নেতা বিজয় সিং নাহার, উপন্যাসিক মৈত্রী দেবী, সমাজসেবী লেডি রানু মুখার্জি, সমাজসেবী ইলা মিত্র, সাংবাদিক পান্নালাল দাশগুপ্ত, বাম নেতা রনেন মিত্র, আকাশবাণী ঘোষক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী, সাংবাদিক উপেন তরফদার, গায়ক অংশুমান রায়, সাংবাদিক দিলীপ মুখার্জি, লোকসভা ও রাজ্যসভার সাবেক সাংসদ ও সমাজসেবী ফুলরেনু গুহ, সাংবাদিক বাসব সরকার নিবেদিতা নাগ ও নেপাল নাগের মত মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রাপকদের।
ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদ। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান। উপস্থিত ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুন সারোযার কমল। কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান এর সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডঃ মোঃ মোফাকখারুল ইকবাল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডঃ হাসান মাহমুদ বলেন, এই ব্রিগেডের মঞ্চে যারা মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পেয়েছিলেন তাদেরকে আবার সম্মান দিতে পেরে গর্বিত বোধ করছি। সেদিনের ঐতিহাসিক ব্রিগেডে গোটা পশ্চিমবঙ্গ মিলিত হয়েছিল। আমার তথ্য মতে সেদিন ব্রিগেডের ঐতিহাসিক জন সমাবেশে ১৫ লাখ মানুষ ছিলেন। আমি মনে করি, সেদিনের ব্রিগেডে মুজিবের সাথে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মিলনের মধ্যে দিয়ে আমাদের বিজয় উৎসব সম্পন্ন হয়েছিল।
অতিথি সুব্রত মুখার্জি বলেন, বঙ্গবন্ধু পশ্চিমবঙ্গের কাছের মানুষ ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কলকাতার ছাত্র অবস্থা থেকে বর্ণময় জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন। দিনটিকে স্মরণ করে তিনি বলেন, সেদিন দুপুর একটার মধ্যে কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল ব্রিগেড। তিনটের সময় রাজভবন থেক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইন্দিরা গান্ধী এই ব্রিগেডে আসেন। আমি তখন মঞ্চের নীচে ছিলাম। এটা আজ পর্যন্ত আমার দেখা ব্রিগেডে সর্বকালের সেরা জনসমাবেশ।
বিশেষ অতিথি মোহম্মদ ইমরান বলেন, আজকের দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব কতটা তা সকলেই জানেন। আজ আমারা দিনটিকে স্মরণ করে একটি প্রতীকী স্মরণসভা করছি। এর কারণ দুই বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতির আদান প্রদান। এর পাশাপাশি তিনি পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে তুলে ধরেন পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ কতোটা আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার বক্তব্যে গভীর ভাবে পদ্মা সেতুর বিষয় প্রকাশ পায়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুন সারোযার কমল বলেছেন, যে লক্ষাধিক মানুষ এখানে বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণ শুনেছিলেন, তার প্রতীকী স্মরণসভায় আমি উপস্থিত। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বক্তৃতা অনেক আছে। কিন্তু ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে তিনি যে ঐতিহাসিক বক্তব্য রেখেছিলেন তা বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরও গর্বের বিষয়। এর সাথে তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি চারণ করেন।
অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা, সুভাষ সিংহ রায় এবং দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (প্রস) শাবান মাহমুদ। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও স্বপ্না দে।
কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠানে উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন দুই বাংলার শিল্পীরা।
খুলনা গেজেট / কেএম