বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পুরোপুরি এখনো সচল হয়নি। আর এর প্রভাব পড়েছে খুলনাসহ আশেপাশের এলাকায়ও। খেটে খাওয়া মানুষের আয় কমে যাওয়ায় তাদের অবস্থা বেশ নাজুক। বাড়ি ভাড়া দিতে না পেরে কেউ রাতের আধারে পলিয়ে যাচ্ছে, কেউ আবার চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে ফেরৎ দিতে না পেরে সর্বশান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
গত বছর নভেম্বর মাসে সর্বপ্রথম চীনে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এরপর পরই সারা বিশ্বে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এ বছরের প্রথম দিকে, মার্চ মাসে আমাদের দেশে সর্বপ্রথম এটি শনাক্ত হয়। এরপর সরকার লকডাউন ঘোষণা করে। চাপে পড়ে খেটে খাওয়া মানুষ। প্রথম দিকে মানুষ এর প্রভাব বুঝতে না পারলেও এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এ মন্দার কারণে অনেকে বাসাবড়ির জিনিষপত্র বিক্রি করে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে।
বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশীয় প্রতিষ্ঠিত কেবল কোম্পানীতে কর্মরত রয়েছেন এমনই এক কর্মকর্তার সাথে শুক্রবার আলাপ হয়। আলাপকালে তিনি বর্তমান পরিস্থিতির কিছু বিবরণ দিয়ে বলেন, কিছুদিন পূর্বে তিনি টাইফয়েড আক্রান্ত ছিলেন। কোম্পানির কাছে ছুটি চাইলে তাকে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। বেতন ঠিক মতো দেয় না। মালিক পক্ষ থেকে বিভিন ধরনের বকাঝকা করা হয়। বর্তমানে তিনি বাসাভাড়া ঠিকমতো দিতে পরছেন না। বাড়ির মালিকও তার ও পরিবারের সাথে ভালো ব্যবহার করেন না।
অপর দিকে, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের অবস্থা খুবই নাজুক। কাজের আশায় অনেকে গ্রাম থেকে শহরে এসে কাজ না পেয়ে আবার তারা খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এদের মধ্যে ছেলে মেয়ের লেখাপড়া করানো ও অর্থাভাবে সংসার চালানোর জন্য এলাকার সুদখোরদের কাছে সুদে টাকা ধার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। ঠিকমতো টাকা ফেরত দিতে না পারায় তারা বাড়ি গিয়ে সুদসহ মুল টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। শুক্রবার এমনই বিবরণ দিলেন শহরে কাজ করতে আসা শ্রমিক আনারুল। তিনি পাইকগাছা উপজেলার বড়দল গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামে কাজ না থাকায় শহরে এসেছিলেন কাজের আশায়। কাজ না পেয়ে তিনি মন মরা হয়ে খুলনা নগরীর সাতরাস্তা মোড়ে বসে ছিলেন।
শুধু আনারুল নয়, দিন দিন এদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সামনে রয়েছে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ। এই পরিস্থিতি কিভাবে তারা মোকাবেলা করবে, তা নিয়ে শঙ্কিত সবাই।
খুলনা গেজেট/এমএম