দুয়ারে কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এজন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা।
খুলনার কয়রা উপজেলাতে এবার ৪৭ টি মণ্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আমাদী ইউনিয়নে ১২ টি, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে ১২ টি, বাগালী ইউনিয়নে ৮ টি, মহারাজপুর ইউনিয়নে ৩ টি, কয়রা সদর ইউনিয়নে ৬ টি, উওর বেদকাশী ইউনিয়নে ৩ টি ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে ৩ টি। সেজন্য মন্দিরগুলোতে চলছে দুর্গাপূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এ দিকে ব্যস্ততায় যেন দম ফেলার ফুরসত নেই প্রতিমা শিল্পীদের। তাদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে দুর্গা, গণেশ ও কার্তিকসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা।
আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। উপজেলার মন্দিরগুলোতে চলছে তারই প্রস্তুতি। ভাস্কররা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধনে। দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণভাবে সাজাতে মন্দির গুলোতে দিনরাত চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
কয়রা উপজেলার বিভিন্ন মন্ডপে সরেজমিনে ঘুরে একাধিক প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিম্ন ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে, খড়ের আউর লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন। এছাড়াও কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। প্রতিমা তৈরিতে ৪-৫ জন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন বলেও জানান প্রতিমা শিল্পীরা।
ভক্তরা জানান, দেবীদুর্গা আসবেন তাই ঢাক, ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবীদুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে প্রতিমা বানানোর কাজ প্রায় শেষ। এখন রঙ তুলির আঁচড়ে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিখুঁতভাবে মনের মাধুরি মিশিয়ে তারা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। শরতের শিশির ভেঁজা কাঁশফুলই শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তা দেয়। আর দুর্গোৎসব ঘিরে নানা আয়োজনে ব্যস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সব ধর্ম ও শ্রেণির বাঙালির মধ্যেও। পূজার আনন্দে মাতোয়ারা বাঙালি জাতি। মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমা সাজসজ্জার কাজ। আয়োজকরা ছুটছেন দর্জিপাড়ায়। মা দুর্গার লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ির জরির কাজ, গণেশের ধুতিতে নকশাদার পাড় বসানো আর মহিষাসুরের জমকালো পোশাক তৈরির কাজ। কেউবা ছুটছেন কামারপাড়ায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বানিয়ে নিচ্ছেন দেবীর হাতের চক্র, গদা, তীর-ধনুক ও খড়গ-ত্রিশূল আর ভীষণ ঘষামাজায় মিস্ত্রিরা ব্যস্ত মণ্ডপ গুলোকে নতুন রূপে সাজিয়ে তুলতে। ডেকোরেটর কর্মীদেরও ঘুম নেই। আয়োজকদের ফরমায়েশ আর ডিজাইন অনুযায়ী গড়ে তুলছেন পূজামণ্ডপ।
জাতির মঙ্গল কামনায় সব অশুভ শক্তি বিনাশে প্রতিবছর মহালয়ার দিনে দেবী দূর্গা শ্বশুরালয় থেকে পিতৃগৃহে আগমন করেন। আসুরিক শক্তির বিনাশ আর পার্থিব শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য হিন্দু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে মা দূর্গার আরাধনা করে আসছেন।
কয়রা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পূজা উদযাপন পরিষদ খুলনা জেলা শাখার উপদেষ্টা সাংবাদিক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রী বলেন, দুর্গোৎসব সকলের জন্য একটি আনন্দময় উৎসব, কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদ ও খুলনা জেলা শাখার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিচালিত হবে এবারের দুর্গাপূজা।
এসময়ে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সেনাবাহিনী, পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য অনুরোধ করছি।
খুলনা গেজেট/এএজে