খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত
  শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  নিউইয়র্কে ছুরিকাঘাতে নিহত ২

কম বয়সীদের ফুসফুস ক্যানসার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে

গে‌জেট ডেস্ক

সাধারণত ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বয়সসীমা কিছুটা বেশি দেখা যায়। অবশ্য জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্তের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এক বছরব্যাপী ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসার রোগীদের ওপর বাংলাদেশ ক্যানসার স্টাডি গ্রুপের চালানো এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় এক বছরে ১ হাজার ৮৬৮ জন ফুসফুস ক্যানসার রোগীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।

গবেষণাটির দায়িত্বে ছিলেন জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

গবেষণায় দেয়া উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার গড় বয়স আগে ছিল ৬০ বছর। সেটি এখন কমে এসেছে। এখন ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যাকে আশঙ্কাজনক বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।

গবেষণায় বলা হয়, প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীর রোগ নির্ণয়ের সময় থেকেই পুষ্টিহীনতায় ভুগতে থাকেন। ৬৬ দশমিক ২ শতাংশ রোগী কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। বেশির ভাগ রোগী বা ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশের প্রতি মাসে পারিবারিক আয় ১০ হাজার টাকার নিচে।

তামাক ও মাদক সেবন করা রোগীদের এই ক্যানসারে আক্রান্তের হার অত্যধিক। যারা আক্রান্ত তাদের ৮০ শতাংশেরও বেশি রোগী ছিলেন ধূমপায়ী, আর তার প্রায় অর্ধেক রোগী ধোঁয়াহীন তামাক সেবন করতেন। এর মধ্যে আবার ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ রোগী উভয় ধরনের তামাক সেবনে অভ্যস্ত ছিলেন।

ফুসফুস ক্যানসারের পাশাপাশি অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে ভুগছিলেন ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী।

রোগ নির্ণয়ের সময়, দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক কার্যক্ষমতার অর্ধেকে নেমে এসেছিল। ৪০ শতাংশ রোগী অর্থনৈতিক কিংবা শারীরিক অক্ষমতার কারণে চিকিৎসা নেয়নি কিংবা চিকিৎসা শেষ করতে পারেননি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

১৭ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী শুধু কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের বয়স ৫০ বছরের নিচে ছিল, তুলনামূলক শিক্ষিত ছিলেন, শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন, অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ছিলেন না অথবা যারা চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি নিয়েছেন, কেবল তারাই বেশি দিন বেঁচে ছিলেন বলেও গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ফুসফুস ক্যানসার রোগীদের ১ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২৭ শতাংশ, যা কিনা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

গবেষকরা বলেছেন, ‘আমাদের মতো সীমিত সক্ষমতার দেশগুলোতে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি আর্থসামাজিক নিয়ামকগুলো সমান গুরুত্ব বহন করে।

জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১০ লাখের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। বর্তমানে ডায়াগনোসিস সুবিধা এবং ক্যানসার চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপক উন্নতি সত্ত্বেও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।’

তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী মোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি এশিয়া অঞ্চলে হয়ে থাকে। এর কারণ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ে সক্ষমতা ও আর্থ-সামাজিক ভিন্নতাকেই দায়ী করা হয়। উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে এই কারণগত ভিন্নতার মাত্রা বেশি হওয়ায় সামগ্রিকভাবে চিকিৎসার ফলাফল আরও হতাশাজনক করে তুলেছে।

তিনি জানান, সার্বিকভাবে বাংলাদেশে চিকিৎসা-পরবর্তী বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুস ক্যানসারের কোষগত ভিন্নতার পরিবর্তন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে দেরি, আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য নয়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের সময় রোগীর কর্মক্ষমতা এবং চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি সহনীয় ক্ষমতা একেবারেই কম থাকে। লিঙ্গের ভিন্নতা কিংবা জাতিগত উৎপত্তির ভিন্নতার মতো বিষয়ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সঠিক তথ্য সরবরাহে বাধা থাকে। এসব বাধা দূর করতে গবেষণা করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!