সুনামগঞ্জের এবারের বন্যা কতটা ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর তা ইব্রাহিম মিয়ার থেকে আর কেউ জানে না! তার বাবা আশরাফ আলী মারা গেছেন গত শুক্রবারে রাত ১২টায়। কিন্তু সর্বত্র বন্যার পানি থাকায় নিজের বাবার লাশ দাফন করতে পারেননি।
বন্যার সময় সাধারণত কোন ভাবে কবরে লাশ দাফন করতে না পারলে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু নিজের বাবার লাশ বন্যার পানিতে ভাসিয়ে দেয়ার সাহস হয়নি। আর তাই পলিথিন মুড়িয়ে বাক্সবন্দি করে বাঁশের উপর বেঁধে রেখেছেন। এমন নিষ্ঠুর নির্মম ও হৃদয়বিদারক ঘটনা সুনামগঞ্জ শহরতলীর ইব্রাহিমপুরে। একই জায়গাতে আরো একটি লাশ পড়ে আছে এভাবে। এই চিত্র জেলার সর্বত্র, যেখানে কবরে পানি উঠে গেলে দাফন করার সুযোগ নেই।
গত ৬ দিন ধরে সারা জেলা ডুবে আছে থৈথৈ পানির নিচে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাজার এমনকি উঁচু কবরস্থানও পানির নিচে ডুবে আছে। পা রাখার এতোটুকু জায়গা নেই। মানুষের বাড়িঘরে গলা পর্যন্ত পানি। এই পরিস্থিতিতে আরো বেশি ভয়ঙ্কর, কেউ মারা গেলে। কারণ লাশ দাফনের কোন উপায় নেই। সেই লাশ দাফন করার কোন ব্যবস্থা নেই। এমনই করে গত শুক্রবার মারা যাওয়া সুনামগঞ্জের শহরতলীর আশরাফ আলীর লাশ পড়ে আছে গত ৫দিন ধরে। স্বজনরা আর কোন উপায় না পেয়ে এভাবেই পানির উপর পলিথিন পেচিয়ে বাক্সবন্দি করে ফেলে রেখেছেন। এমন নিষঠুর ভাবে লাশ না রেখে হয়তো বন্যার পানিতে ভাসিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু নিজের প্রিয় বাবা যে বাবা কাঁধে করে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন, সব কিছু থেকে আগলে রেখেছেন সেই বাবার লাশ ভাসিয়ে দেয়ার সাহস করতে পারেননি। তাই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তারপরও পানি নেমে যাওয়ার অপেক্ষা আছেন।
এলাকাবাসী জানান, বন্যার সময় কবর পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় লাশ দাফন করা যায় না। তাই হাওর এলাকার কবর গুলো উঁচু করার উদ্যাগ নেয়া খুব জরুরী ।
সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, কবরের পাশে লাশ দাফন করে ফেলে রাখা হয়েছে এটা খুবই অমানবিক, আর এখন লাশ পঁচে গন্ধ বের হচ্ছে। গ্রামের পাশে হওয়ায় এতে মানুষ অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই সরকার উদ্যোগ নিয়ে কবর গুলো উঁচু করলে বর্ষায় লাশ দাফন নিয়ে আর সমস্যায় পড়তে হবে না।
খুলনা গেজেট/ আ হ আ