খুলনার পাইকগাছায় কপোতাক্ষ পাড়ে বন্ধুর হাতে কলেজ পড়ুয়া বন্ধু খুনের ঘটনা তিন দিন ধরে খুলনা অঞ্চলের মিডিয়াগুলোতে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হচ্ছে। বান্ধবীর আবদার রক্ষায় মোটর সাইকেল কিনতে টাকার জন্য মুক্তিপণ আদায়ে বন্ধুকে ডেকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে কপোতাক্ষে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়। খুনির স্বীকারোক্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। গত তিন দিন অনেক খোঁজা খুজিতে পাওয়া না গেলেও আজ সেই লাশ চরে ফিরিয়ে দিয়েছে কপোতাক্ষ।
বিষয়টিকে সমাজবিজ্ঞানীরা কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন জানি না। তবে সমাজ নিয়ন্ত্রকরা হয়তো বলবেন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। আসলে কি এ সব ঘটনা বিচ্ছিন্ন ? নাকি আমাদের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছ্ববি ?
যে ছেলেটি ভিকটিম এবং যে খুন করেছে উভয়ই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বয়স কতই বা, বিশ এর মধ্যে। এরাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, যাদের হাতে আমরা রেখে যাবো সমাজ তথা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব। যারা একটি উন্নত বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে বলে আমরা দাবি করছি। এরই ধারাবাহিকতায় উন্নত দেশের কাতারে পা বাড়াবে ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে জিডিপি, পার ক্যাপিটা ইনকাম, সামাজিক অবস্থা, অবকাঠামো সহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা হচ্ছে বা হবে। কিন্তু একটি উন্নত দেশের নাগরিক হিসেবে যে মানসিকতা দরকার তার দিকে কি আমরা খেয়াল রাখছি ?
করোনা মহামারিতে আমরা অনেক স্বজন হারিয়েছি। প্রতিদিন মৃত্যুর সংবাদ শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছি, বলেছি আর কখনো তোমার নিষেধ অমান্য করবো না। অন্যের হক আদায় করবো। কাউকে ন্যায্য পাওনা বা অধিকার থেকে বঞ্চিত করবো না। প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে কারো ক্ষতি করবো না। কিন্তু বাস্তবতা ?
আমরা মানবিক হওয়ার বদলে অমানবিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছি। সমাজের অন্যের প্রতি দায়িত্ব বা কর্তব্য ভুলে গেছি। সব কিছুতেই যেন আমি, আমার ও আমাদের কতৃত্ব চাই! ত্যাগ নয়, ভোগেই সাফল্য দেখছি! পৌঁছে যাচ্ছি নির্লজ্জের সর্বোচ্চ সীমায়। এর মধ্যদিয়ে আমরা কী শেখাচ্ছি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ? পাইকগাছার কপোতাক্ষ পাড়ের ট্রাজেডি চোখে আঙ্গুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিলো। (ফেসবুক ওয়াল থেকে)
খুলনা গেজেট/এএ