রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার ওসি মাহবুব আলম তার অফিসকক্ষে বসে এক ব্যক্তির সঙ্গে খাম আদান-প্রদান করছেন, এমন একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে মাহবুব আলমকে ওসির দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
আরএমপির মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আরএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার ওসি মাহবুব আলমকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করেছেন। এখন খাম লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত হবে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ওসি তার অফিসে নিজের চেয়ারে বসে রয়েছেন। সামনে থাকা এক ব্যক্তি তার কাছে একটি খাম চান। এ সময় ওসি তার ড্রয়ার থেকে খাম বের করে দেন। পরে ওই ব্যক্তি কিছু একটা ভরে খামটি এগিয়ে দিলে ওসি সেই খাম তার ড্রয়ারে ঢোকান। এটা ওসির ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ক্লিপ উল্লেখ করে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। তবে যে ব্যক্তি খামটি ওসিকে দিয়েছেন তার দাবি, বোনকে শ্লীলতাহানির কিছু গোপনীয় নথিপত্র একটি খামে করে তিনি ওসিকে দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন, ওই খাম দেওয়ার সময় সেখানে বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই খামে করে নথিপত্র ওসিকে দেওয়া হয়।
একইভাবে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি মাহবুব দাবি করেছেন, ওই খাম নেওয়ার সময় তার কক্ষে আরও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তার এবং পুলিশ বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন করতে এই ভিডিও ছড়ানো হয়েছে।
ফাঁস হওয়া ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ওসি মাহবুব খাম দেওয়া এবং পরে তাকে আবার ওই ব্যক্তির খাম ফেরত দেওয়ার মাঝের কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। আবার খাম লেনদেন, ওসির বসে থাকা এবং ওই ব্যক্তির বসে থাকা দেখানো হলেও ওই ব্যক্তি খামের ভেতরে কী দিলেন সেটি ভিডিওটিতে নেই।
খাম ফেরত দেওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত এলাম। বিশ্বাস করেন! আমি আরেক দিন এসে ডিটেইলস বলব, তখন বুঝবেন ও আমাকে কী পর্যায়ে পেরেশানিতে নিয়ে আসছে। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না, যদি অফিশিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম আমি। সে জিএম স্যারের কাছে ৪০ জন লোক নিয়ে গেছে রিমুভ ফরম সার্ভিস করার জন্য আমার বোনের। আমি কী বোঝাব বলেন! অন্যায় যে করে, আর যে সহে- দুজনে সমান অপরাধী।’
ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরের কথা হয় খাম প্রদানকারী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীতেই। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার বোন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে চাকরি করেন। সম্প্রতি তিনি কর্মকর্তার দ্বারা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওসির সঙ্গে দেখা করে কিছু নথিপত্র একটি খামে করে তাকে দিই। গত মাসের এই ঘটনা। এটি নিয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে বেশ কয়েকজন লোক উপস্থিত ছিলেন। বেশি লোক থাকার কারণে গোপন নথিপত্র একটি খামে দেওয়া হয়েছিল। সেটি কেউ ভিডিও করে ভাইরাল করেছে। ওই খামে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। আমরা তো ভিকটিম, আমরা কেন পুলিশকে টাকা দিতে যাব।’
আর পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, ‘এটা গত মাসের ২০ তারিখের ঘটনা, এক নারীর শ্লীলতাহানির বিষয়ে কিছু নথিপত্র একজন খামে করে আমাকে দিয়ে গিয়েছিল। সেখানে মিডিয়াকর্মীসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেটি কেউ ভিডিও করে রেখেছিল। আমার এবং পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সেই ভিডিও ছড়ানো হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/এইচ