খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত
  শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  নিউইয়র্কে ছুরিকাঘাতে নিহত ২

ওষুধের দাম গড়ে ৩৫% বেড়েছে

গেজেট ডেস্ক

বাতের চিকিৎসায় খাদ্য সম্পূরক হিসেবে ব্যবহৃত ‘আর্থ-এ টিএস’ ট্যাবলেট কয়েক দিন আগেও ২০ টাকা করে পাওয়া গেলেও এখন প্রতিটির দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। অর্থাৎ ট্যাবলেটপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া বেড়েছে সর্দিজ্বর, চর্মরোগ, অ্যালার্জি, শ্বাসনালির সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধের দাম।

দেখা গেছে, ওষুধের দাম সর্বনিম্ন ২০ এবং সর্বোচ্চ ৬৬ শতাংশ বেড়েছে।

গড়ে দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। গত কয়েক দিন চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ওষুধের বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি দোকান ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বছরের শুরুতেই এসব ওষুধের দাম বেড়েছে।

শ্বাসনালির সংক্রমণসহ বিভিন্ন সংক্রমণে ব্যবহৃত ফ্লুক্লক্স প্রতি বক্স ৮০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫ টাকা। অ্যালার্জির ট্যাবলেট ফেক্সো প্রতি পাতায় বেড়েছে ১০ টাকা, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ওসারটিল প্রতি পাতায় বেড়েছে ২০ টাকা, এনজিলক বক্সপ্রতি বেড়েছে ১০০ টাকা, হার্টের ওষুধ নাইট্রোকার্ড প্রতি বক্স ট্যাবলেটের দাম ১২০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪২০ টাকা।

অ্যান্টিবায়োটিক সেফ-৩ প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪৫ টাকা। ভিটামিন বি সমৃদ্ধ নিউরোজেনের দাম প্রতি প্যাকেটে ২০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা।

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দর, জ্বালানি সরবরাহ কমে যাওয়া এবং কাঁচামাল ক্রয়ে ডলার সংকট ওষুধের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না তাঁরা।

সমিতির তথ্য মতে, দেশে ২১৩ স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, যারা দেশের মোট ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে। দেশে ওষুধের বাজার প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের ১৫৭ দেশে পণ্য রপ্তানি করে থাকে। গত সাত বছরে এ খাতে রপ্তানি আয় প্রায় তিন গুণ বেড়ে হয়েছে ১৮৮ মিলিয়ন ডলার।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয়ের অংশ প্রতিবছর কমছে। বিপরীতে ব্যক্তির পকেটের খরচ দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যয়ের তিন-চতুর্থাংশ বহন করছে ব্যক্তি নিজেই।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে স্বাস্থ্য ব্যয়ে সরকারের অংশ ছিল যথাক্রমে ২৮, ২৬ ও ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারের অংশ ক্রমান্বয়ে কমছে। আবার ওই বছরগুলোতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৬৪, ৬৬ ও ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ চিকিৎসা করাতে গিয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বাড়ছে। তবে এই ধারা শুধু তিন বছরের নয়, এই প্রবণতা দুই দশকের বেশি সময়ের।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ঊর্ধ্বমুখী পণ্যমূল্যের বাজারে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। জীবনমান নিম্নমুখী, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে ওষুধের দাম যে মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে, তা অযৌক্তিক ও অন্যায়। ভোক্তার অধিকার উপেক্ষা করে এমন মূল্যবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত নয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। কারণ ওষুধের দাম ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় কারণে হতদরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার বাইরে থাকছে। এর মধ্যে দাম যদি আরো বেড়ে যায়, তাহলে চিকিৎসাবৈষম্য আরো বাড়বে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ওষুধের দাম নির্ধারণ হওয়া উচিত দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। উৎপাদন খরচ মুখ্য হতে পারে না। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে। এভাবে চলতে থাকলে বিভিন্ন রোগব্যাধিও বাড়বে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা মানুষ, যাদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তাদের অবস্থা আরো করুণ হবে। এ জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেশি করে বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া উচিত, যাতে হাসপাতালের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে না হয়।

ঔষধ প্রশাসন চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিন বলেন, সরকার থেকে অনুমোদন নিয়ে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ার কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে, তা ঠিক। কমবেশি সব কম্পানির বিভিন্ন ওষুধের দাম ধাপে ধাপে বাড়ছে। একসঙ্গে নয়।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!