নব্বই দশকে পর্দা কাঁপানো চিত্রনায়ক ওমর সানী গত ৮ মে ফেসবুক ভেরিফায়েড প্রোফাইলে এক স্ট্যাটাসে ‘প্রিয়তমা’ শব্দে কয়েকজন অভিনেত্রীর নাম উল্লেখ করেন। যেখানে প্রিয়তমা গল্পে কোন কোন অভিনেত্রীকে বোঝেন, সেসব তারকাদের নাম উল্লেখ করেন চিত্রনায়ক। কিন্তু সেখানে অভিনেত্রী ওমর সানী ‘প্রিয়তমা’ শব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রী অঞ্জনার সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়ায়! তারই প্রতিক্রিয়ায় এবার এ চিত্রনায়ককে বুদ্ধিজীবী খেতাব দেয়ার দাবি তোলে বৃহস্পতিবার (১১ মে) ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দেন নূতন।
এ অভিনেত্রী লেখেন, ‘নায়িকা মৌসুমীর জামাই সাবেক নায়ক ওমর সানিকে বুদ্ধিজীবী খেতাব দেয়ার দাবি জানানো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ওমর সানি আমার ছোট ভাই, খুব আদরের। আমি ওরে বাংলাদেশ ফিল্মে জন্মাইতে দেখছি। এটা একটু অহংকার নিয়েই বললাম। ইমরান ছিল ওর নাম। এফডিসিতে আসা, কাজ করা, সব চোখের সামনেই। যাইহোক, সে তার একটা অবস্থান করেছে, অভিনেতা হয়েছে। বাম হাতে সালাম দিতো, তাই বেয়াদব ভাবতাম। পরে দেখলাম না, ভালো ছেলে। তবে ব্যাকাতেরা বাম পাশেই চলে।’
‘এমন কিছু অভ্যাস আমারও আছে। ভাবি বলে সম্মান করে আমায়, আমি ভাই বলে জানি। সম্মানে তার কমতি নেই, তাই দোয়া তার জন্য চিরকাল। তাকে আমি ভালোবাসি তার প্রমাণ, সানী কোনোদিন (জাতিয় চলচ্চিত্র পুরস্কার) অভিনেতা হিসেবে পেয়েছে কিনা আমি জানি না। শেষ ২০১৪ পর্যন্ত আমি জানি সে পায়নি। তা নিয়ে আমার অনেক জায়গায় আক্ষেপ ছিল। কেন তাকে দেয়া হয়নি? সে কি যোগ্য না, সেটা যারা দেয় তারা জানেন ভালো করে। তবে সে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য। সে সম্মাননা না পেয়ে থাকলে সে পাবে ইনশাআল্লাহ।’
নূতন লেখেন, ‘কিন্তু সানীর জীবনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ও প্রভাব আসে, যখন সে মৌসুমী কে বিয়ে করে। মৌসুমীর দিনের পর দিন উজ্জ্বল চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার। আর সানী খানিকটা পরে যাওয়া ক্যারিয়ার সামাল দিতে না পেরে মানসিকভাবে দ্বিধায় পরে যায়। যার খেসারত সে মানসিকভাবেই প্রতিনিয়ত দিচ্ছে। অনেক চড়াই-উতরাই তাকে পার হতে হয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সে সেই মানসিক খেসারত বা ভালোবাসা দেখানোর জন্য নিজের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা স্বঘোষিত মেধাবী দাবি করে বার বার খেই হারিয়ে ফেলছে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, ওমর সানী কি ফিল্ম হিরো, না মৌসুমীর জামাই? সে কি অভিনেতা, না বুদ্ধিজীবী? সে কি আইনজীবী, না বিচারক?’
তিনি আরও লেখেন, ‘নিজের কাছে সে কি বা নিজেকে সে কি ভাবে, তা হয়তো সময় বলে দিবে বা প্রকাশ পাবে। মানুষের অনেক গুন থাকতে পারে। বিচারক বা বুদ্ধিজীবী হওয়ার মতো জ্ঞান হয়তো তার বিকশিত হবে বা হচ্ছে, আস্তে আস্তে। তবে আমার কাছে সে আমার ভাই, সে একজন ফিল্ম হিরো। এবার আসি মূল পর্বে। ওমর সানী নব্য একটা সেক্টর বা বুদ্ধিবৃত্তিক নামকরণ করার ঝুঁকি নিয়েছেন, তার জন্য সাদুবাদ। কীভাবে এই নামকরণ আসছে তার বিস্তারিত আমার জানা নেই। তবে ওমর সানীর থেকে এই চিন্তা এলে তাকে বুদ্ধিজীবী খেতাব দেয়ার দাবি জানানো যেতে পারে। কারণ আমি ওমর সানীর লেখা দেখেই এই নামকরণের সঙ্গে পরিচিত হলাম।’
এ অভিনেত্রী লেখেন, ‘প্রিয়তমা। প্রিয়তমা কী? এর সংজ্ঞা কী? বা কী কী ভাবে তা হয়? বা আদৌ এই নামের কোনো ব্যাখ্যা আছে কিনা? তা আমার জানা নেই। তবে ওমর সানীর নামকরণের ফর্দ দেখে মনে হলো ওই একই (যাহা ফাইভ তাহাই পাঁচ)। যাইহোক, এ স্ববিচারিক প্রক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আমার বন্ধু সুপারস্টার অঞ্জনা। অঞ্জনা যে বিষয় নিয়ে রাগ করেছে বা অভিমান প্রকাশ করেছে তা নিয়ে আমি মোটেও বিচলিত নই। কারণ এই নামকরণের ভিত্তি কতটা তা আমার জানা নেই। আর ৫০ বছর চলচ্চিত্র জীবনে আমি এই নামের অস্তিত্ব পাইনি। বা ওমর সানী হয়তো ওই যে বললাম, মানসিকতার খেসারত দেয়ার মধ্যে আছে তাই এমন একটা চিন্তার উদ্ভব ঘটিয়েছেন।’
তিনি লেখেন, ‘সেটা যে যার মতো অভিব্যক্তি, মতামত প্রকাশ করতেই পারেন। কে, কাকে উচ্চতর আসনে বসাবেন, কাকে বসাবেন না সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমি এই লেখা নিয়ে ভাবা বা গুরুত্ব দিয়ে ভেবে ঘোষিতভাবে দ্বিমত প্রকাশ করার একটাই কারণ। অনেক নতুন প্রজন্ম আছেন, তারা সঠিক কিছু জানতে চায়, তারা ফিল্মের মানুষদের ভালোবাসে, বিশ্বাস করে, তাই তাদের সঠিক কিছু জানান দেয়া জরুরি। তাদের এ ধরনের অদ্ভুত নামকরণ করে দ্বিধান্বিত না করাই ভালো। কে কাকে ভালোবাসলো, কী ভাবলো, তা পরের কথা। তবে সঠিক জানানো জরুরি। বা অভিনেত্রীর বাইরে একজন মানুষ বা দর্শক হয়ে আমরাও জানতে চা,ই আমাদের অবস্থান আসলে কী?’
নূতন লেখেন, ‘এবার একটু হেডম মানে ফুটানি নিয়ে বলি। ওমর সানী বাবারে আগে জানো ফিল্মের চেইন কী? শাবানা-ববিতার নাম নিয়ে পাবলিক সিম্প্যাথি নেয়া শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ। এসব ফেসবুকেই মানায়, বাস্তবে মানসিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়। আমি এখন (মান্না বা সালমান)-কে ভালো বলে তোমায় গালি দিলে মানুষ বাহবা দিবে, আমার সঙ্গে তাল মিলাবে। তবে তাতে আমি সাময়িক খুশি হলেও বুদ্ধিমানদের কাছে আমার ব্যক্তিত্ব ও দুর্বল মানসিকতা প্রকাশ পাবে। (শাবানা, শবনম, ববিতা, কবরি, রোজিনা, অঞ্জনা, সুচরিতা, অলিভিয়া, সুচন্দা, চম্পা, দিতি, শাবনাজ, অঞ্জু, রোজী সিদ্দিকী, মায়া হাজারিকা, সুমিতা)… আমার কথা বাদ, আমি খুব সামান্য। এদের অনেক অনেক পরের অবস্থান আমার, ছোট প্রিয় আদরের বোন মৌসুমী, তার পরে বাকিদের অবস্থান।’
‘তুমি যখন “সুচিত্রা সেন” কে নিয়ে আসছো, মানে কলকাতা। তাহলে তো তোমার এই চেইনে আরও মিনিমাম ১০টা নাম যুক্ত হবে, যাদের সাথে ফিল্মের সব বিশেষণ যুক্ত হবে। তাদের চিনো না হয়তো ভালো করে, বা জানা নেই। তারপর অনেক অনেক পরে আসবে তোমার বিচারিক নাম, যদিও তোমার বিচার বা লেখা তুমি লেখতেই পারো আমি যেমন লেখলাম। তবে তোমার এই স্বঘোষিত বিচারিক প্রক্রিয়া আমাকে আবার জানান দিল যে তুমি মানসিক ভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে আছো। মৌসুমী নিঃসন্দেহ গুণী অভিনেত্রী এবং সুন্দরী আমি তার ভক্ত, শাবনূরকে আমি কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনুসরণ করি শাবনূর কোটিতে একজন। পূর্ণিমা গুণী। কাকে কার সঙ্গে মিলাতে হয় তা বুঝতে হবে।’
‘মৌসুমীর এই গুণ আর ব্যক্তিত্বকে সস্তা বিচারিক প্রক্রিয়ায় বলার জন্য বলে বা লেখার জন্য লেখে বার-বার জানান দিয়ে তিতা করার এই তিতা মানসিকতা প্রকাশ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে তুমি মৌসুমীর নামটাকে তিতা বানায়ে ফেলছো। আমি এই কথা রাগ অভিমান নিয়ে বলিনি আমি খুবই সাধারণ, সামান্য আমি কিছুই না। তবে আরও অনেক আছে যাদের নাম ভেবে চিন্তায় নিতে হয় সেই ভাবনা চিন্তার জ্ঞানের পরিধি তোমার সীমিত। যেহেতু তোমার কিছু ফেসবুক অনুসারী আছে তারা না বুঝে সায় দেয় তাই তাদের সঠিক কিছু জানাও যেন তারা ভুল না জানে। আর নিজে জেনে নাও। তা না হলে কর্মের ফলে কিছু দিন বছরও না তোমার নাম ভুলে যাবে। এবং মৌসুমীর অসম্মান হবে। তোমার নাম ভুলে যাক তা আমি চাই না,মৌসুমীর ওপর কারো বিরূপ ধারণা জন্মাক তাও চাইনা। আমি তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি। আই লাভ ইউ আমার ভাই চলচ্চিত্র অভিনেতা ওমার সানি।’
খুলনা গেজেট/ এসজেড