নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, এ জয় উৎসর্গ করছি আমার নেত্রী শেখ হাসিনা এবং নারায়ণগঞ্জের জনগণকে, যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন; মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও এ জয় উৎসর্গ করছি।
রোববার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নাসিক নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৯২টি কেন্দ্রে আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ২৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৭১ ভোট।
আইভী বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি নেত্রীর প্রতি, যিনি আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন; আমার দলের প্রতি, যারা আস্থা নিয়ে আমার সঙ্গে কাজ করছেন। জনসাধারণ, আমার ভোটার ও নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যারা নিজের জীবন বাজি রেখে আমার জন্য কাজ করেছেন, তাদের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা।
তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছর নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে চাই। আমি আমার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাদের উৎসর্গ করতে চাই। সব ধরনের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তাদের জন্য কাজ করতে চাই।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রোববার সকাল আটটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। সারাদিন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হয়। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়ার যায়নি।
নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আইভী ও তৈমূর আলম ছাড়া মেয়র পদে লড়েন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসিম উদ্দিন (বটগাছ) এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)।
এছাড়া ২৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নয়টি কাউন্সিলর পদে লড়েন ৩৪ জন প্রার্থী।
এর আগে পরপর দুইবার নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ সালে তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করেন। পরের বার ২০১৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। পরাজিত করেন বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনকে।
সিটি করপোরেশন হওয়ার আগে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন আইভী। ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন (এখন পৌর মেয়র বলা হয়)।
সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দুবার নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ও কদম রসুল পৌরসভা বিলুপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। একই বছরের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।