খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ; পাশের হার ৭৭.৭৮
  খাগড়াছড়ির দীঘিনালাতে যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার

এসএসসিতে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হলো এসিডদগ্ধ সোনালী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার এসিডদগ্ধ সোনালী এবার এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৯৬ পয়েন্ট পেয়ে এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে। পাটকেলঘাটার কুমিরা পাইলট বহুমুখী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে।

সোনালী সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার নকাটি গ্রামের নুর ইসলাম খোদেজা দম্পতির সন্তান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনালি খাতুনের বয়স এখন ১৯ বছর। মাত্র ১৮ দিন বয়সে মা-বাবার সাথে এসিড আক্রান্ত হয়েছিল ছোট্ট শিশু সোনালী। ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর রাতে মা-বাবার সাথে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় দূর্বৃত্তরা তাদের উপর এসিড ছুড়ে মারে। এতে মা ও বাবার সাথে শিশু সোনালীর মুখ ও শরীর ঝলসে যায়। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে সোনালী ও তার বাবা-মা এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়। সে দিনের সেই ছোট্ট সোনালী পাটকেলঘাটা থানার কুমিরা পাইলট গার্লস হাইস্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

সোনালির বাবা নুর ইসলামের বাবা এবং চাচার জমির বাঁশঝাঁড় প্রতিবেশির জমিতে পড়া এবং সেই বাঁশ কাটাকে কেন্দ্র করে গোলোযোগের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ওই বাঁশ কাটাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিরোধে থানায় মামলা হয়। মামলা করার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ১২টার দিকে দূর্বৃৃত্তরা সোনালী ও তার বাবা-মা’র উপর এসিড নিক্ষেপ করে।

সোনালীর এই পর্যন্ত টিকে থাকা ও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া খুব সহজ ছিল না। স্কুলে যাওয়ার বয়স হওয়ার পর সোনালীকে স্কুলে ভর্তি করার পর স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি। প্রথম দিকে তাকে স্কুলে যেতে নানারকম সামাজিক বাঁধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। এক্ষেত্রে একশনএইড বাংলাদেশ’র সহযোগিতায় স্বদেশ স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সমাজের সাধারণ মানুষেকে কাউন্সেলিং, সামাজিক সম্পৃক্ততা করে সোনালীর স্কুলে পড়ালেখা অব্যাহত রাখার প্রয়াস চালায়। ফলে সোনালীর শিক্ষা জীবনের মাধ্যমিক স্তর সফলতার সাথে সমাপ্তের পথ সুগম হয়েছে। সোনালী স্বপ্ন দেখছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। তার দরকার আর্থিক ও সামাজিক সহযোগিতা।

সোনালীর বাবা নুর ইসলাম ও মা খোদেজা খাতুন জানান, সোনালী আজ একশনএইড বাংলাদেশ, স্বদেশ ও সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় তার পড়ালেখা চালাতে পেরেছে। তারা বলেন, ‘এজন্য আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে তার শিক্ষক ও সকল সংগঠনকে বিশেষ করে স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, একশনএইড বাংলাদেশ নুরুন নাহার এবং তার সকল শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই’।

কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষক গৌতম কুমার দাশ জানান, সোনালীর এই সাফল্যে তিনি এবং তাঁর শিক্ষকমন্ডলী খুশি। সোনালী সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে আজ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে যাওয়ার পর্যায় এসেছে। এজন্য ওর অদম্য মানসিক সাহজ ও সকলের সহযোগিতা ওকে এতো দূর আসতে সাহায্য করেছে। আমাদের পক্ষ থেকে সোনালীকে অভিনন্দন। সোনালীকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকেক সহযোগিতা করা জরুরি। আমাদের স্কুলের সোনালী এ পর্যন্ত সুনামের সাথে লেখাপড়া করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে ওকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি। আগামীতে সোনালীর জন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

একশনএইড বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার নুরুন নাহার বেগম বলেন, সোনালীর এই সাফল্যে অভিভূত। তিনি সোনালীর উচ্চশিক্ষায় সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

মানবাধিকার কর্মী ও স্বদেশ’র নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, একশনএইড বাংলাদেশ, স্বদেশ ও সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্কের (এসবিজিএন) এবং দেশ-বিদেশের যেসব ব্যক্তি ও সংগঠন এসিড সারভাইভার সোনালীকে এই পর্যন্ত আসতে সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি স্বদেশ’র পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা। সোনালীর এই সাফল্যে তিনি ও তাঁর সংগঠন সোনালীর উচ্চ শিক্ষালাভে স্বদেশ সবসময় পাথে থাকবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!