খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

এমপি আনার হত্যার স্বীকারোক্তিতে যা বললেন মোস্তাফিজ

গেজেট ডেস্ক 

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলায় নতুন গ্রেপ্তার আসামি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফকির (৩৪) আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আসামিকে উপস্থিত করে জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। আবেদনের প্রেক্ষিতে মোস্তাফিজের জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারক। মুস্তাফিজ খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার যুগীপাশা গ্রামের মো. ইমান আলী ফকিরের ছেলে। তিনি পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন।

মুস্তাফিজের জবানবন্দি সূত্রে জানা যায়, মামলার প্রধান আসামি শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে মোস্তাফিজ ও ফয়সালের চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে যোগাযোগ হয়। শিমুল ভূঁইয়া তাদেরকে বড় অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কলকাতায় যেতে বলে। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেটসহ সকল কাজ শিমুল ভূঁইয়া করে দেবে বলে আশ্বাস দেয়। জরুরি পাসপোর্ট করার জন্য মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে টাকাও দেয়া হয়। ১৫ই এপ্রিল মোস্তাফিজ ও ফয়সাল খুলনা থেকে ঢাকায় এসে মামলার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বসুন্ধরার এল-ব্লকের ৩২ নং রোডের ১৯২৯ নং বাসায় ওঠে। পরদিন শাহীনের পিএস পরিচয় দিয়ে সিয়াম হোসেন দু’জনকে ভারতীয় ভিসার আবেদন কেন্দ্রে নিয়ে যায়।

মুস্তাফিজ ও ফয়সালকে বলা হয়, তাদের পাসপোর্টের জন্য শাহীনই টাকা দিয়েছিল, তিনিই তাদেরকে দ্রুত ভিসা করে দেবেন। ১৫ই এপ্রিল থেকে ২৪শে এপ্রিল পর্যন্ত মুস্তাফিজ ও ফয়সাল শাহীনের তত্ত্বাবধানে বসুন্ধরাস্থ বাসায় অবস্থান করে। এ সময় তাদের দেখার দায়িত্বে ছিল সিয়াম। মুস্তাফিজ ও ফয়সালের ভারতীয় ভিসার জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট তৈরি, রোগের প্রেসক্রিপশনসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য শাহীন প্রচুর টাকা খরচ করছে বলে সিয়াম জানায়। ইতিমধ্যে তারা ভারতীয় চিকিৎসা ভিসা পেয়ে ২৫শে এপ্রিল ঢাকা থেকে খুলনা ফিরে যায়।

জবানবন্দি সূত্রে আরও জানা যায়, শিমুল ভূঁইয়া ও আক্তারুজ্জামান শাহীনের পরিকল্পনা মোতাবেক মুস্তাফিজ ও ফয়সাল ২রা মে কলকাতায় যায় এবং নিউমার্কেট এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেয়। পরিকল্পনা মোতাবেক মুস্তাফিজুর রহমান ১০ই মে কলকাতার নিউটাউনস্থ সঞ্জিবা গার্ডেন্স নামক বাসায় ওঠে। শাহীনের পরিকল্পনায় ভিকটিম আনোয়ারুল আজিম আনার ওই বাসায় গেলে শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে জিহাদ, ফয়সাল, মুস্তাফিজসহ অজ্ঞাতনামারা ভিকটিমকে অজ্ঞান করে হত্যা করে এবং লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে মৃতদেহ থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়। আনারকে হত্যা করা হলে মুস্তাফিজ ও ফয়সাল ১৯শে মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং তারা দু’জনেই শাহীনের বসুন্ধরার বাসায় ওঠে।

৬ দিনের রিমান্ডে মুস্তাফিজ ও ফয়সাল জানায়, তাদের পাসপোর্ট আক্তারুজ্জামান শাহীনের বসুন্ধরাস্থ বাসায় রেখে পালিয়েছিল। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাসপোর্ট উদ্ধারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা পুলিশ এ দুই আসামিকে নিয়ে অভিযান চালায়। এরপর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল-ব্লকের ৩২ নং রোডের আক্তারুজ্জামান শাহীনের ১৯২৯ নং বাসার ৩য় তলা ফ্ল্যাটের মাস্টার বেডরুমের খাটে থাকা ম্যাট্রেসের নিচ থেকে আসামি মো. মুস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাহাজী ওরফে শাজীর ব্যবহৃত পাসপোর্ট উদ্ধার করে ডিবি।

২৭শে জুন তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে ২৬শে জুন মামলার পলাতক আসামি ফয়সাল আলী ও মুস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল। এদিন দুপুর থেকে হেলিকপ্টারে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে আনোয়ারুল আজিম হত্যায় অংশ নেয়া ৭ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার মূল কারণ জানতে পারেনি ডিবি। এর আগে আনার হত্যা মামলায় গত ৩রা জুন আসামি শিলাস্তি রহমান, ৪ঠা জুন তানভীর ভূঁইয়া এবং ৫ই জুন শিমুল ভূঁইয়া, ১৪ই জুন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা এখন কারাগারে আছেন। ১৩ই জুন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তবে রিমান্ডে কিছু স্বীকার না করায় তাকে ৩ দিন পর কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে মামলার আলামত উদ্ধারে ২৪শে জুন গ্যাস বাবুকে আবারো ৫ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। আদালত তা নামঞ্জুর করেন। তবে গ্যাস বাবুর ফেলে দেয়া ৩টি মুঠোফোন উদ্ধারে ডিবি পুলিশকে ঝিনাইদহে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!