খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

এমপি আনার হত্যা : তদন্তে রাজনৈতিক বিরোধ সামনে, আড়াল হচ্ছে স্বর্ণ চোরাচালান

গেজেট ডেস্ক

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খুনের নেপথ্য কারণ স্বর্ণ চোরাচালান। ইতিমধ্যে এই চোরাচালান চক্রের কয়েকজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকও হয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে হঠাৎ মোড় বদলের চেষ্টা চলছে।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব’ মোড়কে স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়টিকে আড়াল করতে তত্পর একটি চক্র। এই চক্রের নেপথ্যে রয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রভাবশালী একাধিক সংসদ সদস্য ও রাজনীতিক। ফলে আনার হত্যার মূল রহস্য শেষ পর্যন্ত অধরা থেকে যাওয়ার আশংকা করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের কলকাতার সিআইডি পুলিশ আজীম হত্যা মামলার তদন্ত করছে। তারা মিডিয়ায় এতো কথা বলে না। তারা বলেছে, সঠিক তদন্ত শেষে কথা বলবে। তবে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ প্রতিদিনই এমপি আনার হত্যাকান্ড নিয়ে কথা বলছে। এটি মামলার মোটিভ ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হতে পারে বলে সংশয় তৈরী হয়েছে। সংসদ সদস্য আজীমের মতো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শতাধিক মানুষ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। একটা হত্যাকান্ডেরও বিচার হয়নি। স্বর্ণ চোরাচালানের মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কেউ চলে গেলে তাকে আর বাঁচিয়ে রাখে না তারা। এমপি আজীমের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। এই নেটওয়ার্ক অনেক শক্তিশালী।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে এপার থেকে যায় সোনা। হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচারও হচ্ছে। আর ওপার থেকে আসে মাদক ও অস্ত্র। বাংলাদেশের আকাশ পথের মধ্যে ঢাকা এয়ারপোর্ট প্রধান কেন্দ্র স্বর্ণ চোরাচালানের। ঢাকার এয়ারপোর্টের পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেট এয়ারপোর্টকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব এয়ারপোর্টে কাস্টমসসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার বেশিরভাগ কর্মকর্তারা পদায়নও পান স্বর্ণ চোরাচালান মাফিয়াদের পছন্দে। প্রভাবশালী এমপি ও রাজনৈতিক নেতারা এ সঙ্গে জড়িত। তাই স্বর্ণ নিরাপদে বিনা বাধায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চলে যায়। স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদাররা এসব এমপি ও রাজনৈতিক নেতাদের কোটি কোটি টাকা দিয়ে থাকেন প্রতি মাসে। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি দিয়ে যাত্রী সাজিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে পাচার হয় স্বর্ণ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতেও পদায়ন পান মাফিয়াদের পছন্দের লোক। এই মাফিয়ারা হোয়াইট কালার ক্রিমিনাল হিসেবে পরিচিত। ভারতে বৈধভাবে স্বর্ণ আনলে ২০ ভাগ ট্যাক্স দিতে হয়। এতে পোষায় না স্বর্ণালঙ্কার বানানোর ব্যবসায়ীদের। ইতিমধ্যে একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী, যিনি চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ছিলেন, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। জানা যায়, উনিও স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত।

এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনকারী আকতারুজ্জামান শাহীন। আর হত্যাকান্ড বাস্তবায়নকারী শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমান উল্লাহ। শাহীন ও শিমুলের বিশাল একটি বাহিনী রয়েছে। যারা স্বর্ণ পাচারের সাথে জড়িত। এই বাহিনীটি মূলত সোনা বহনকারীর দায়িত্ব পালন করতো। সীমান্ত দিয়ে পাঠিয়ে দিতো। এই বাহিনীকে নেতৃত্ব দিতেন কয়েকজন প্রভাবশালী বর্তমান ও সাবেক এমপি। যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা ও সাতক্ষীরার অনেক রাজনৈতিক নেতা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এর সাথে জড়িত। এই হোয়াইট কালার অপরাধীরা এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত। এরা বিগত সরকারের আমলেও অনুরূপভাবে স্বর্ণ চোরাচালান করে করেছে। স্বর্ণ চোরাচালানের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতা নিহত হয়েছেন। যারা বহন করে, তারাও টাকা পায়। বিরোধ বাধলেই খুনাখুনি হয়।

২০১৪ সাল থেকে এমপি আনার ওই অঞ্চলে স্বর্ণ চোরাচালান ও মাদক পাচারের একক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এটা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রভাবশালী বর্তমান ও সাবেক এমপি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। এই বিরোধে এমপি আনার হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন, এটা উভয় দেশের আইন-শৃ্ঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত। বর্তমানে প্রভাবশালী স্বর্ণ চোরাচালানের মাফিয়া গ্রুপটি এখন এমপি আনার হত্যাকান্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নানা ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেভাবে অতীতে শতাধিক হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি, এমপি আনার হত্যাকান্ডও যেন ঢাকা পড়ে যায়, তারা এমনটি ঘটানোর ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত। এই হত্যাকান্ডটি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা একেক দিন একেক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা প্রকৃত ঘটনাটি আড়াল করার ‘ষড়যন্ত্র’ বলেও স্বজনহারা পরিবারের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন।

এদিকে, সংসদ সদস্য আজীম হত্যাকান্ডের বিচার আদৌ হবে কিনা তা নিয়েও তার পরিবার ও নির্বাচনী এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। স্বয়ং এমপি আনারের মেয়ে মমতারিন ফেরদৌস ডরিন সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এই আশংকা প্রকাশ করে বলেন, খুনিদের ছাড়িয়ে নিতে বড় বড় জায়গা থেকে তদ্বির আসছে। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খুনিদের বিচার অবশ্যই হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!