খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৮৮৭
  ঢাবির হলে পিটিয়ে যুবককে হত্যা: ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ৩, তদন্ত কমিটি গঠন
  বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রিসিভার নিয়োগ দিতে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট

এমপি আনার হত্যার দুই মাস, সংসদীয় ‍আসন শূন্য ঘোষণায় জটিলতা

গেজেট ডেস্ক

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন—এ নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কেও অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এ ঘটনায় জড়িতরা। তার পরও আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে জাতীয় সংসদে তার আসন শূন্য ঘোষণা করা যাচ্ছে না। মরদেহ শনাক্ত কিংবা আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা ছাড়া সংসদ সচিবালয় এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নিতে পারে না। ফলে জীবিত কিংবা মৃত, যে অবস্থায়ই হোক, আনোয়ারুল আজিম আনারের জন্য অপেক্ষা করছে সংসদ। এ কারণেই বাজেট অধিবেশনে তার জন্য শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়নি। অবশ্য মৃত্যুর বিষয়ে আইনি ফয়সালা না হলেও ৯০ কার্যদিবস পার হলে আসনটি শূন্য ঘোষণায় কোনো বাধা থাকবে না। কারণ কোনো সদস্য অনুমতি ছাড়া এতদিন সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে তার আসন শূন্য হয়ে যাবে।

জানা গেছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে জটিলতায় পড়েছে জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমপির লাশ খুঁজে না পাওয়ায় তার ঝিনাইদহ-৪ সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণা করতে পারছে না সংসদ সচিবালয়। এমন প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নিয়ে আরও অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখনোই কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। আমরা আরও অপেক্ষা করব। কারণ এ ঘটনা খুবই ব্যতিক্রমধর্মী। আমাদের সামনে কোনো নজির নেই।’

সংসদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত কোনো সংসদ সদস্যের মৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যেই আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। সংসদ সদস্য মারা গেলে স্পিকার শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেন। সংসদের অধিবেশন চলাকালে কেউ মারা গেলে ওইদিনের জন্য অধিবেশন মুলতবি করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু গত ৩ জুলাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশন শেষ হয়েছে। ৫ জুন শুরু হয়ে এ অধিবেশন চলে ২২ দিন। অধিবেশনে এই সংসদ সদস্যের জন্য কোনো শোক প্রস্তাব আনেননি স্পিকার। সরকারের তরফ থেকে মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া না হলে তার জন্য আরও ৬৮টি কার্যদিবস অপেক্ষায় থাকবে সংসদ সচিবালয়। অর্থাৎ আনারের আসনটি অনুপস্থিতজনিত কারণে শূন্য ঘোষণা করা আরও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্যের মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করার কথা। নির্বাচন কমিশনেরও ৯০ দিনের মধ্যে ওই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশ্য সংবিধানের ৬৭ ধারার ১ (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদের অনুমতি না নিয়ে কোনো সদস্য একনাগাড়ে ৯০ কার্যদিবস সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে ওই সদস্যের আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনকে জানায় সংসদ। নির্বাচন কমিশন ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করে থাকে।

সংসদ সদস্য আনোয়রুল আজিমের আসনে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর  বলেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ সংসদ সচিবালয়ের এখতিয়ার। এখানে নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নেই। সংসদ সচিবালয় নিশ্চিত হয়ে আসনটি শূন্য ঘোষণা পূর্বক প্রজ্ঞাপন করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নির্বাচন কমিশনে পাঠাবে। এর পরই নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের আয়োজন করবে।’

গত ১৩ মে কলকাতায় ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাষ্ট্রপতি তার মৃত্যুতে শোকবার্তা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক বন্ধু ও চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমানকে। কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসে শাহীন। পরে আমানসহ ছয়জন মিলে এমপি আজিমকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে ট্রলিব্যাগের মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ফেলে দেয়। তার এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের ভাষ্য অনুযায়ী, টুকরো টুকরো করে ফেলে দেওয়া লাশের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয় ওই বাসার সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে। বর্তমানে আনারের মেয়ে ডরিনের সঙ্গে সেই খণ্ডাংশগুলোরই ডিএনএ টেস্টের প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, সংসদ সদস্য আনারের মরদেহের উদ্ধার হওয়া খণ্ডাংশের ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) টেস্টের স্যাম্পল দিতে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে চিঠি পাঠিয়েছে কলকাতার সিআইডি। শিগগির চাচাকে (আনারের ভাই) সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় যাবেন তিনি। শনিবার গণমাধ্যমকে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএনএ টেস্টে মরদেহের খণ্ডাংশের সঙ্গে ডরিনের স্যাম্পল মিলে গেলেই আনারের লাশ সম্পর্কে নিশ্চিত হবে পুলিশ। এর পরই তার হত্যাকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে সরকার। আর সেই ঘোষণার পরই জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ-৪ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হবে। তার আগে এই এমপির অপেক্ষায় থাকবে সংসদ।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!