খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ কোরবানীর পশুর হাট নগরীর জোড়াগেট থেকে নাদুস-নুদুস রং-বেরঙের ষাঁড় নিয়ে বাড়ী ফিরতে জটলা বাঁধতো মোড়ে মোড়ে। ব্যস্ত সড়কের দু’পাশে গরুর রশি ধরে টানার এ দৃশ্য দর্শকদের মধ্যেও আবেগ-ঐতিহ্য নাড়া দিতো। কিচ্ছুক্ষণ পরপর উচ্চস্বরে দর্শকের প্রশ্ন, ও ভাই কত নিলো? উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হতেন, তবুও রাগান্বিত হতেন না বরং মনে মনে খুশিই হতেন সবাই।
এসব আবেগ-ঐতিহ্য এবার অতীত। বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে উপার্জন হ্রাসের কারণে এবার কোরবানীর পশু ক্রয়ের সক্ষমতা কমেছে অনেকেরই। হাটেও ক্রেতা সমাগম কম হওয়ায় বিক্রির পরিমাণও তুলনামুলক কমেছে। এরমধ্যে অল্প দামে ছোট গরুর ও ছাগলের কদর বেশি ক্রেতাদের।
জোড়াগেট কোরবানীর পশুর হাটের অন্যতম তত্বাবধায়ক কেসিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তিনদিনে দুই হাজার ৩৪২টি পশু বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৯২০টি গরু, ৪১৮টি ছাগল ও ৪টি অন্যান্য কোরবানী পশু বিক্রি হয়েছে। বিক্রয়মুল্যের শতকরা ৫% হারে হাসিল আদায়ে এ পর্যন্ত ৬৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪৭টাকা হাসিল আদায় হয়েছে।’
গত ২৬ জুলাই উদ্বোধনের পর থেকে কেসিসি পরিচালিত জোড়াগেটস্থ কোরবানীর পশুর হাটটিতে ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয়। ছোট গরুর চাহিদাই বেশি বলে হাসিল আদায়কারীরা জানিয়েছেন।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের খাটিয়া ও হোগলাপাটি বিক্রেতা মোঃ মোসলেম উদ্দিন বলেন, কোরবানীর এক সপ্তাহে খাটিয়া ও হোগলাপাটি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকার বেশি লাভ হতো। এবার বেচাকেনা খুব কম। খরচ উঠবে কি না সন্দেহ আছে। রাস্তায় কোন গরু দেখেন এবার? এভাবে পাল্টা প্রশ্ন করলেন তিনি।
ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মাদ্রাসা রোডের জনৈক কোরবানী দাতা গরুর দাম বলতে বলতে অতিষ্ঠ হয়ে প্রিন্ট করে লটকে দিয়েছেন পাশে।
অন্যদিকে, প্রতি বছর কোরবানী দিতেন, এবার দিতে পারছেন না- এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। লোকলজ্জার ভয়ে বের হচ্ছেন না তারা। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে কর্মহীন বা উপার্জন হ্রাসের কারণে নিয়্যত থাকার পরও আর্থিক সক্ষমতা হারিয়েছেন অনেকেই।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মুফতী আব্দুল্লাহ্ ইয়াহহিয়া বলেন, কোরবানীর মূল আকিদা আত্মিক, আর্থিক নয়। কোরবানীকৃত পশুর কিছুই পৌঁছায় না সৃষ্টিকর্তার কাছে, পৌঁছায় শুধু তাকওয়া (আল্লাহ্ ভীরুতা)। করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ নিশ্চিয় সেটা তামাম জাহানের মালিক অবহিত। সে কারণে নিশ্চিয় মহান আল্লাহ্ আমাদের অন্তর আত্মার আর্জি শুনবেন।
খুলনা গেজেট/এআইএন