জুলাই গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতাদের নেতৃত্বে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন ফরিদুল হক। খুলনা শহরের নাজিরঘাটে জন্ম নেয়া ও বেড়ে উঠা ফরিদুল হক পড়াশোনা করেছেন খুলনার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ খুলনা জিলা স্কুলে। স্কুল জীবন শেষ করে বাবার কর্মসূত্রে ঢাকায় পাড়ি দেয়া ফরিদুল ছাত্র জীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। পথশিশুদের সমস্যা ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করেছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে। পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে।
এসবেরই ধারাবাহিকতায় প্রায় এক দশক আগে যুক্ত হন রাষ্ট্রচিন্তা নামক রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠনের উদ্যোগের সাথে। এই সংগঠনের বেশ কয়েক বছরের তৎপরতায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন রাজনৈতিক বয়ান ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ হাজির হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে, যা আজ সারাদেশের মানুষের মুখে মুখে। এসবের মধ্যেই ফরিদুল যুক্ত হন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের আহ্ববানে সাড়া দিয়ে গড়ে তোলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন যুব অধিকার পরিষদ। দায়িত্ব নেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব হিসেবে। তার নেতৃত্বেই সংগঠনটি ২০২১ সালে ইন্ডিয়ান এম্বাসীর সামনে প্রতিবাদী নাটক ও বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে সীমান্তে ফেলানী হত্যার এক দশক পালন করে।
পরবর্তীতে ওই বছরের মার্চ মাস জুড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেশে আসার প্রতিবাদে দেশব্যাপী হওয়া মোদিবিরোধী আন্দোলনের শুরু করে যুব অধিকার পরিষদ। সে সময় তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর ব্যাপক পুলিশী হামলায় আহত হন ফরিদুল। অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় তার সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে। একাধিক মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে ফেরারি হতে বাধ্য হন তিনি।
পরবর্তীতে রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনীতির প্রশ্নে বোঝাপড়া না হওয়ায় যুব অধিকার পরিষদের দায়িত্ব হস্তান্তর করে ২০২১ সালের আগস্টে রাষ্ট্রচিন্তার একটিভিস্ট অংশের নেতাদের নিয়ে যৌথভাবে গড়ে তোলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নামের রাজনৈতিক সংগঠন। দায়িত্ব নেন রাজনৈতিক সমন্বয়ক হিসেবে। এই সংগঠনের ব্যানারেই অংশ নেন ২০২৩ সালের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সম্মিলিত বিরোধী দলসমূহের যুগপৎ আন্দোলনে। রাজপথে নেতৃত্ব দেন ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের বিরুদ্ধে হওয়া আন্দোলনের। ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। জুলাই আগস্টে অনুষ্ঠিত হওয়া গণ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন সংগঠিত করতে ভূমিকা নেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরপরই দেশের সার্বিক নিরাপত্তা এবং ভারতের আগ্রাসন মোকাবেলায় বিভিন্ন তৎপরতা চালান তিনি। এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী সীমান্তে কিশোরী স্বর্ণা দাশের হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন তিনি। হত্যাকান্ডের পরপরই ছুটে যান স্বর্ণা দাশের বাড়িতে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে জোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্ববান জানান। এরপর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের আহ্ববানে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দায়িত্ব হস্তান্তর করে যুক্ত হন জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায়।
সবশেষে গত ২৮ ফ্রেব্রুয়ারিতে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ঘোষিত গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দানকারী তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিবের দায়িত্ব নেন ফরিদুল হক।
খুলনা গেজেট/এনএম