বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কথিত আটক’ ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দিতে এবং আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোড়া বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর বুধবার শুনানি হয়নি। একজন বিচারপতি অসুস্থ থাকার কারণে দ্বৈত বেঞ্চ না বসায় শুনানি হয়নি।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজত থেকে ছয় সমন্বয়ক মুক্তি না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে তাঁদের পরিবার।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে প্রথমে তিনজনকে গত শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে আনা হয়। তাঁরা হলেন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের। তাঁদের মধ্যে নাহিদ ও আসিফ সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাকের তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। পরদিন সন্ধ্যায় সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে আসে ডিবি। এরপর রোববার ভোরে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তুলে আনা হয় নুসরাত তাবাসসুমকে। এরপর থেকে তাঁরা মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে আছেন। ডিবির দাবি, তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই তাঁদের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ নাহার বলেন, ‘আমি দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের নিয়ে গিয়ে ছেলেরা ভালো আছেন দেখালেও পরে কী হচ্ছে, সেটা তো আমরা জানতে পারছি না। তাই ছেলে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত দুশ্চিন্তা কাটছে না।’
মমতাজ নাহার আরও বলেন, তাঁর ছেলে নাহিদ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। ওখান থেকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছেলের শরীরে ক্ষত রয়েছে। তাঁর চিকিৎসা দরকার। ডিবি হেফাজতে তাঁর কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (আজ) ডিবি কার্যালয়ে যাব। হাসপাতালের দেওয়া ওষুধপত্র অনুযায়ী ওষুধ কিনে দিয়ে আসব।’
গতকাল ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করতে পারেননি আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘লুঙ্গি পরা অবস্থায় তাঁর ছেলেকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। বুধবার ছেলের জন্য একটি গেঞ্জি ও প্যান্ট নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পরে ডিবির অভ্যর্থনাকক্ষে কাপড়গুলো রেখে এসেছি।’
কবে ছেলে মুক্তি পেতে পারেন, সেটা জানতে ডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বিল্লাল হোসেন। ডিবির কর্মকর্তারা তাঁকে বলেছেন, আদালতের আদেশ ছাড়া তাঁর ছেলে ছাড়া পাওয়ার সুযোগ নেই।
গত ১৯ জুলাই মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় এক বন্ধুর বাসা থেকে নাহিদকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। এক দিন পর পূর্বাচল এলাকায় তাঁকে ফেলে যাওয়া হয়। নাহিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল আঘাতের চিহ্ন। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অপর দুই সমন্বয়ক আসিফ ও বাকেরকেও একই দিন তুলে নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ দিন পর তাঁদের দুজনকে চোখ বাঁধা অবস্থায় যেখান থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে ফেলে যাওয়া হয়। এরপর থেকে আসিফও গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাকেরও।
খুলনা গেজেট/এইচ