খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

এক গোডাউনে তিনদফা রহস্যের আগুন ! (ভিডিও)

 নিজস্ব প্রতিবেদক

পাটের ঝুট গোডাউন খুলনার আড়ংঘাটার বকুলতলা খানজাহান আলী জুট ট্রেডার্স। এই গোডাউনে একবার নয়, পর পর তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে- এনিয়েই সন্দেহ। সর্বশেষ শনিবার (৭ জানুয়ারি) এই ঝুট গোডাউনটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিটের দেড়ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ড্যাম্পিং ডাউনের কাজ করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গেল কয়েক বছরেই এক গোডাউনে তিন দফা আগুন লেগেছে। বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত। আর এতে ঝুঁকিতে পড়ছেন গোডাউন সংলগ্ন এলাকার মানুষ। যে কোন সময় বড় ধরণের প্রাণহানি বা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

তবে মালিক পক্ষের দাবি, আগুনে তিন কোটির টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ সঠিক নয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, খানজাহান আলী জুট ট্রেডার্সের মালিক মো. সেলিম শেখ দীর্ঘদিন ধরে ঘনবসতি এলাকার মধ্যে পাট গোডাউন তৈরি করে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। বীমার টাকা তোলার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এর আগেও দুইবার একইভাবে এই গোডাউনে আগুন লেগেছিল।

গত দুইবারের মতো এবারও আগুন লাগার পর মালিকপক্ষের কেউ ঘটনাস্থলে আসেনি। এরমধ্যে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি গোডাউনটিতে প্রথম দফায় রহস্যজনকভাবে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর একই গোডাউনে আগুন লাগে। দু’দফার আগুনে পার্শ্ববর্তী একাধিক বাড়িঘর পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আড়ংঘাটা ইউপি সদস্য মো. আল-আমিন শেখ বলেন, এই নিয়ে ৩ বার আগুন ধরেছে। প্রথমবার ফায়ার সার্ভিসের সাথে থেকে আমি নিজে এলাকাবাসিকে নিয়ে আগুন নিভিয়েছিলাম। আগের মতো এবারও পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি (মালিক) কী যে ব্যবসা করেন তা আমরা জানি না।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাহফুজুল আলম সুমন বলেন, দুপুর ১২টার পর ধোয়া উড়তে দেখি। আস্তে আস্তে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে সংবাদ দেই। ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে কাজ শুরু করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ধোয়া উড়ছে। ফলে আশঙ্কা রয়ে গেছে। এই পাটগুলো না সরালে আরও আগুন লাগতে পারে। আমরা গোডাউন মালিককে জানিয়েছি আবাসিক এলাকায় যেন এই ব্যবসা না করে। কিন্তু সে তারপরও শোনেনি। এটা বসতি এলাকা, কয়েকটি বাড়ি আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মো. তুহিন আহমেদ বলেন, খানজাহান আলী জুট ট্রেডার্সের মালিক সেলিম শেখকে পাটের ঝুট গোডাউনে আগুন লেগেছে। গোডাউনের পাশেই আমার বাড়ি। ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২৩ মিলিয়ে তিন দফায় এই গোডাউনে আগুন লেগেছে। মানুষের কৌতুহল হচ্ছে বার বার আগুন লাগার পরে তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি হারিয়ে যান। পাশে আমার বাড়ি থাকায় প্রতিবারই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এরআগেরবার বাড়ির সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়েছে। প্রায় দুই লাখ টাকার জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। এবার টিনশেড বিল্ডিং করেছি। এবার সেটারও অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গোডাউনের আশপাশে অনেকেই বসবাস করে। সরিয়ে নিতে বলা হলে তিনি সরিয়ে নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েও শোনেনি। এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে জানানোর পরও এই জনবসতির মধ্যে তিনি গোডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন।

অগ্নিকাণ্ডকালে গোডাউনের অদূরে মো. সেলিম শেখ -খুলনা গেজেট

এদিকে ঘটনাস্থলে পাওয়া না গেলেও খানজাহান আলী জুট ট্রেডার্সের মালিক মো. সেলিম শেখ মুঠোফোনে বলেন, আগুন লাগার সময় আমিও গোডাউনেই ছিলাম। শ্রমিকরা কাজ করছিল। হঠাৎ করে দেখি ধোয়া উড়ছে, কিছু বুঝে উঠার আগে মুহূর্তেই আগুন লেগে যায়। দ্রুত সবাই বেরিয়ে আসি। আগুনে আমার প্রায় ৩ কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথা বলবে। সত্যি-মিথ্যা কি; আমার ক্ষতি হয়েছে,।আমি বুঝছি জ্বালা কি। আমার ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৬০ লাখ টাকা। ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি টাকার ওপরে। গোডাউনে মেশিন রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার। এবার বুঝাবো কাকে ? আমার পার্টনারকে বুঝাতে পারছি না। ‘ঘর পোড়র মধ্যে আলু পোড়া দিলে কেমন লাগে ? আমি যদি বলি পিছন থেকে আগুন লাগিয়ে আমাকে আটক করানোর চেষ্টা করেছে তাহলে কেমন হবে ?

একাধিক অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে ব্যবসায়ী সেলিম আরো বলেন, ‘আগে আগুন লেগেছে, তবে তেমন কিছু নয়।’

খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস অফিসের উপসহকারি পরিচালক তানহারুল ইসলাম বলেন, আড়ংঘাটা বকুলতলা এলাকায় পাটের ঝুট গোডাউনে আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে আমরা দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করি। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট দেড়ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ড্যাম্পিং ডাউনের কাজ চলমান রয়েছে। রাতে আমাদের সদস্যরা এখানে থেকে কাজ করবে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে রবিবার (০৮ জানুয়ারি) সকাল লেগে যেতে পারে।

পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে স্থানীয়দের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত করলে বিষয়টি আমরা বুঝতে পারবো, আসলে কি ঘটনা ঘটেছে। তার আগে বলা মুশকিল। যারা এখানে কাজ করে তাদের অসতর্কতাবশত বা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে আগুন লেগে যেতে পারে। আগুন লাগার কারণটা কি এবং কি কারণে আগুন লেগেছে পরবর্তীতে আমরা জানাতে পারব। এরআগেও এখানে আগুন লেগেছিল, আমরা নিভাতে এসেছিলাম।

খুলনা গেজেট/কেডি/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!