খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

এক উত্তরাতেই হারুনের যত সম্পদ

গেজেট ডেস্ক

পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হারুন অর রশীদ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার। এর আগে ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। চাকরির জীবনে যেখানে হাত দিয়েছেন ‘সোনা’ ফলেছে। তার বিত্তীয় সাফল্য সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। সম্পদে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর, আশুলিয়া ও কক্সবাজারের টেকনাফে অঢেল সম্পদের মালিক তিনি। বেশ কয়েকটি হোটেল ও রিসোর্টের কর্ণধার সাবেক এই ডিবি প্রধান।

জানা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের আশকারায় হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। সিনিয়র অফিসারদের পাত্তা দিতেন না। উত্তরায় কয়েকটি স্থানে সরেজমিন গিয়ে তার সম্পদের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। কিছু সম্পদ আত্মীয়ের নামে কিনেছেন তিনি। কিছু সম্পদ দখল করার অভিযোগ রয়েছে।

গত রবিবার দুপুরে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের ২৬/এফ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকাটি খুব নিরিবিলি। লেকের পাড়ে ১০ কাঠার ওপর নির্মিত আটতলা বাড়ির টপ ফ্লোরে সপরিবারে বাস করছিলেন ডিআইজি হারুন। বাড়িটির মালিক তিনি। চতুর্থতলা পর্যন্ত ভারতের একটি কোম্পানিকে ভাড়া দেওয়া। পঞ্চমতলায় থাকেন গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী। ষষ্ঠতলায় থাকেন কাস্টমসের এক কর্মকর্তা। সপ্তমতলাটি ডুপ্লেক্স। বাসাটি ইউরোপের আদলে সাজানো। সরঞ্জামাদি সব বিদেশি।

নাম প্রকাশ না করে ভবনের একজন নিরাপত্তাকর্মী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সর্বশেষ তিনি ৩ আগস্ট সকালে বাসা থেকে বের হন। ওইদিন তার স্ত্রী ও দুই সন্তান অন্য কোথাও চলে গেছেন। তারা আর আসেননি। হারুন অর রশীদ যখন বাসায় আসতেন তখন কঠোর নিরাপত্তার বলয় থাকত। বাসার আশপাশে সাদা পোশাকধারী পুলিশ থাকত। নায়ক-নায়িকারা নিয়মিত আসত। তার বাসাটি মার্বেল পাথরের। সরকার পতনের দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ৪০-৫০ জন যুবক বাড়ির সামনে এসে হারুন স্যারকে খুঁজতে থাকে। তারা জোর করে বাসায় ঢোকে। যুবকরা আমাদের মারধর করে। তারা সাততলায় গিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে টাকা-পয়সা লুট করে। তবে মালামাল ভাঙচুর করেনি। ৯ আগস্ট যুবকরা আবারও হামলা চালিয়ে লুটপাট করলেও ভাঙচুর করেনি। গত শুক্রবার আবার এলে আমরা প্রতিবাদ করি। তারা আমাদের মারধর করে। কয়েকজন ভাড়াটিয়াকেও মারধর করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি এ বাড়ির ভাড়া তোলেন। তিনি স্যারের মামা লাগেন। স্যার আমাদের সঙ্গে কখনো খারাপ আচরণ করেননি।’ পাশেই আরেকটি ছয়তলা বাড়ি, হোল্ডিং নম্বর ৩০। বাড়ির সামনে লেখা আছে, ‘এ সম্পত্তি ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, খাজা গরীবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউ শাখা, উত্তরার কাছে দায়বদ্ধ’। ওই বাড়ির মালিকও তিনি। সেটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাছে ভাড়া দেওয়া। ট্রানজিট যাত্রী বা বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীদের এখানে রাখা হয়। বাড়ির কেয়ারটেকার লেবু মিয়া বলেন, ‘হারুন স্যারকে কখনো দেখিনি। তবে শুনেছি বাড়ির মালিক তিনি। বিমানের ভাড়া তোলেন জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি। পাঁচ কাঠার ওপর বাড়িটি নির্মিত।’

উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়িটি হারুন দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এনায়েত উল্লাহর ছেলে। তিনি বলেন, ‘বাড়িটি আমার বাবার। ১০ কাঠার ওপর একতলা বাড়ি। প্রায় পাঁচ বছর আগে ডিআইজি হারুন বাড়িটি দখলে নেন। বাড়ির সব মালামাল ট্রাকে করে সদরঘাটে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি আমাদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন। এখন যদি প্রশাসন বাড়িটি ফিরিয়ে দেয় তাহলে ভালো হয়। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর আমার মা প্যারালাইজড হয়ে যান।’

উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডের ২৯ ও ৩০ নম্বরে দুটি একতলা বাড়ি আছে। একটি গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আরেকটিতে ছোট ছোট ঘর করে ১০টি রুম করা হয়েছে। প্রতিটি রুমের ভাড়া ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। বাড়িতে বসবাসকারী বিজয় নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা জানি এ দুটি বাড়ির মালিক জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি। মাঝেমধ্যে তিনি এখানে আসেন। শুনেছি ডিআইজি হারুন তার আত্মীয়। সরকার পতনের পর থেকে গোডাউনটি তালা দেওয়া।’ আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, দেশ যখন শান্ত ছিল তখন পুলিশ নিয়ে হারুন স্যার মাঝেমধ্যে আসতেন। তিনি বাড়ির মালিক কি না আমরা জানি না।

উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে ইয়ামাহা নামে একটি মোটরসাইকেলের সার্ভিসিংয়ের শোরুম আছে। নাম প্রকাশ না করে দুজন কর্মচারী বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি জায়গাটি পুলিশের এক কর্মকর্তার। তার নাম আমরা জানি না। আপনি ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলুন।’ তাকে পাওয়া না যাওয়ায় মোবাইলে কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের শাহ মুকদুম অ্যাভিনিউয়ে ১২ নম্বর প্লটে ‘তাজ ফুডকোর্ট’ নামে একটি রেস্তোরাঁ আছে। এর কর্মচারী মনসুর আহমেদ বলেন, ‘এ জায়গার মালিক ডিআইজি হারুন স্যার নন। প্রকৃত মালিক মাহমুদা খাতুন। তিনি পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় থাকেন। জয়নাল আবেদীন নামে একজনের কাছে ভাড়া দেওয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এটি হারুন স্যারের। তথ্যটি সঠিক নয়।’

উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডের ৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১০ কাঠা প্লটে দশতলা মার্কেট করেছেন শ্বশুরের নামে। ৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর হোল্ডিংয়ে সাত কাঠার বাণিজ্যিক প্লট এবং ১৫ নম্বর রোডের ২৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে রয়েছে একটি বাণিজ্যিক ভবন। উত্তরার রবীন্দ্র সরোবরে পাঁচ কাঠার একটি প্লট আছে। উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ৩৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে পাঁচ কাঠার একটি প্লট আছে হারুনের। একই সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়ির পঞ্চমতলায় হারুনের একটি অফিস আছে। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের উত্তরা স্মৃতি কেবল টিভি লিমিটেডের পাশে পাঁচ কাঠার একটি প্লট রয়েছে তার। সেটি ভাড়া দেওয়া। ১২ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডের ২১ নম্বরে আছে ছয়তলা বাড়ি। এটি বন্ধক রেখে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তিনি। ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের প্লটটি ভাড়া দেওয়া। আর ৩ নম্বর রোডের ৪৯ নম্বর প্লটে হারুনের ছয়তলা ভবন রয়েছে। উত্তরা তৃতীয় পর্ব ও পূর্বাচলে কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!