সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা উপজেলার গোলখালী গ্রামের ঐশী মঞ্জুর খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কেসিসি উইমেন্স কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাড়ীতে থাকতে হচ্ছে। অধীর আগ্রহ নিয়ে শিক্ষাবর্ষের শুরুতে অনলাইন ক্লাসে বসেছিল সে। কিন্তু অধ্যক্ষের বক্তব্যটুকু ছাড়া কিছুই দেখতে পায়নি ঐশী। সে কারণে রীতিমতো কান্না শুরু করে দিয়েছে এসএসসিতে এ+ প্রাপ্ত বিজ্ঞান বিভাগের এ মেধাবী শিক্ষার্থী। অনলাইন জঠিলতার কারণেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাকে।
করোনাকালীন পরিস্থিতিতে চরম অনিশ্চিয়তা চারিদিকে। বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যদিয়েও একাদশ শ্রেণির অনলাইন ক্লাস শুরু সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগ। আজ রবিবার (০৪ অক্টোবর) শুরু হল শিক্ষাবর্ষের প্রথম পাঠদান। শিক্ষকরা তেমন কোন সমস্যার মুখোমুখী না হলেও বিড়ম্বনায় পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শহরের তুলনায় পিছিয়েই রইলো গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।
একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে অনেক জঠিল বিষয় শিক্ষকদের সাথে আলোচনা বা প্রশ্নোত্তর পর্বের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কিন্তু অনলাইন ক্লাসে সে সুযোগ না থাকায় পাঠদানের সব বিষয় বোঝার উপায় নেই। ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে টিচার শুধু লেকচার দিয়েই যাচ্ছেন, ল্যাপটপ বা মোবাইলে স্কীনে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বলে বোরিং লাগছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যার কারণে ভিডিও বার্ফিং হওয়া অনলাইন ক্লাস দেখতে সমস্যায় পড়েছে অনেকেই। শহরের কলেজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একাধিক স্মার্টফোন থাকলেও গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়েছেন সংকটে। প্রত্যেকের হাতে নেই পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সুবিধা।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (অবঃ) প্রফেসর ড. সৈয়দা লুৎফুন নাহার বলেন, “অনলাইন ক্লাসে কিচ্ছু হবে না। গুটিকয়েক শিক্ষার্থী হয়তো অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হবে; তবে উপকারের চেয়ে অপকারটাই বেশি হবে। একঘন্টা ক্লাসের নামে সারাদিন মোবাইল হাতে নিয়ে প্রযুক্তি অপব্যবহারটাই করবে উঠতি বয়সের এসব শিক্ষার্থীরা। প্রযুক্তির অপব্যবহারে মেধা-মননের চরম ক্ষতি হবে। নৈতিক চরিত্রেরও অধঃপতন হতে পারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।
তিনি আরও বলেন, কয়জন শিক্ষার্থী প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করবে? বহিঃবিশ্বকে দেখাতেই নামে মাত্র অনলাইন ক্লাস শুরু করা হলো, যে আমরাও পারি! বহিঃবিশ্ব আর বাংলাদেশ এক নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তো একটি বছর লেখাপড়া বন্ধ ছিল। প্রয়োজনে এই মহামারিতেও দুই বছর বন্ধ থাকবে। কিছুই তো করার নেই। তবে অনলাইন ক্লাসে এ জাতির কোন উপকার হবে না বলে মন্তব্য করেছেন এই প্রবীণ শিক্ষাবিদ। তিনি খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কেসিসি উইমেন্স কলেজের পরিচালনা পর্যদেরও সদস্য।
খুলনা গেজেট/এআইএন