‘৩০ বছর ধরে কবর খুঁড়ে আসছি। একসঙ্গে এত কবর খুঁড়তে হবে তা কোনোদিন কল্পনাও করিনি। গ্রামে এত কবর খোঁড়ার লোকও নেই। আশপাশের এলাকার মানুষের সহযোগিতায় কবরগুলো খুঁড়তে হয়েছে।’
শুক্রবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর খন্দকারপাড়ার কবরস্থানে পাশাপাশি পাঁচটি কবর খোঁড়ার কাজে সম্পৃক্ত বৃদ্ধ গেন্দু মিয়া (৬২) অশ্রুসজল চোখে কথাগুলো বলছিলেন।
শাহবাজপুর গ্রামের রিংকু মিয়া, শিপন মিয়া ও মনির হোসেন বলেন, ‘জীবনে অনেক কবর খুঁড়েছি। অনেক অভিজ্ঞতাও আছে আমাদের। কিন্তু একসঙ্গে একই পরিবারের জন্য পাঁচটি কবর এবারই প্রথম খুঁড়লাম।’
তারা আরও বলেন, ‘বুকে অনেক চাপা কষ্ট নিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কবরগুলো খুঁড়েছি। এই গ্রামে আমরা ৮/১০ জন কবর খোঁড়ার কাজ করি। আমাদের পক্ষে এত কবর খোঁড়া সম্ভব ছিল না। পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকেরা কবর খোঁড়ার কাজে সহযোগিতা করায় সুষ্ঠুভাবে কবর খোঁড়ার কাজ করতে পেরেছি।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের প্রয়াত আবুল কাশেমের ইতালি প্রবাসী ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার, ছেলের বউ স্বপ্না আক্তার, দুই নাতনী সৈয়দা কাশফিয়া ও সৈয়দা নূর এবং একমাত্র নাতি সৈয়দ আব্দুল্লাহ মারা যায়।
শুক্রবার বিকেল সোয়া তিনটার দিকে তাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এসময় শাহবাজপুরের বাড়িতে স্বজন ও গ্রামবাসীর আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
এর আগে, শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বাড়ির সীমানা প্রাচীরের বাইরে পাঁচটি খাটিয়া রাখা হয়েছে। বাড়ি সংলগ্ন পুকুরপাড়ের কাছের কবরস্থানে সারিবদ্ধভাবে খোঁড়া হচ্ছে পাঁচটি কবর। বাদ আসর জানাজা শেষে তাদের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
নিহত কাউসারের শ্বাশুড়ি হিরা বেগম জানান, মাত্র দেড় মাস আগে ইতালি থেকে দেশে আসে কাউসার। আজ শুক্রবার সপরিবারে তারা গ্রামের বাড়িতে আসার কথা ছিল। এজন্য বাড়িতে খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতের খাবার খেতে রেস্টুরেন্টে গিয়ে মর্মান্তিক এ ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় তাদের।
খুলনা গেজেট/ টিএ