আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী যারা হয়েছেন, তাদের সবাই আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ প্রার্থী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ রোববার বিকেল ৪টার দিকে এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘জনগণের বিরুদ্ধে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনই সংবিধানের সারবত্তা ভূলুণ্ঠিত করেছে। এখন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা বলা মানে জনগণের সঙ্গে কৌশলে ঠাট্টা করা।’
তিনি বলেন, ‘কিসের আচরণবিধি লঙ্ঘন? এখানে তো জনগণের অংশগ্রহণই নেই, এখানে ভোটারদের ভোটের প্রতি কোনো আগ্রহই নেই। একতরফা একটি নির্বাচন করা হচ্ছে। একই দলের লোক কেউ নৌকা মার্কার প্রার্থী, কেউ আওয়ামী লীগের প্রার্থী, কেউ আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ প্রার্থী, কেউ আওয়ামী লীগের পরোক্ষ প্রার্থী; কেউ এক নম্বর প্রার্থী, কেউ দুই নম্বর প্রার্থী, কেউ তিন নম্বর প্রার্থী।’
ইউএনও ও ওসিদের বদলির জন্য নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আওয়ামী মনা ইউএনও ও ওসিদের রদবদলের সিদ্ধান্ত মাত্র। সমগ্র প্রক্রিয়াটিও হাসি-তামাশার নজিরবিহীন হাস্যরসোদ্দীপক নাটিকা।’
রিজভীর অভিযোগ, ‘দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীরা গণহারে গ্রেপ্তার, বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি, আক্রমণ, হামলা, হত্যা ও জখমের এক ভয়ানক সহিংস পরিবেশের মধ্যে চরম ভয়ভীতির মধ্যে দিনযাপন করছেন। সেখানে নির্বাচন কমিশন কীসের প্রশাসনিক রদবদল করছে? বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন ঘর ছাড়া, এলাকা ছাড়া; তখন নির্বাচন কমিশন পৃথিবীর নিকৃষ্টতম নির্বাচনের তামাশার আয়োজনের প্রতি জনগণের মোটেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।’
এই নির্বাচনে ৬০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না দাবি করে রিজভী বলেন, ‘এমন নির্বাচন নিয়ে এত তোড়জোড় করে কিসের কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন কাজী হাবিবুল আওয়াল? কাজী হাবিবুল আওয়াল কী জানেন না, তার এই তামাশার নির্বাচনকে নিশ্চিত করার জন্য সরকারের হানাদারি আক্রমণে সারা দেশে পালিয়ে বেড়ানো বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ঘটছে?’
রিজভী বলেন, ‘আলবদরের মতো, রাজাকারদের মতো এরা বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে লুটপাট করছে। পুরুষশূন্য বাড়িগুলোতে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করছে, বাড়ির নারীদের অপদস্থ করছে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ও উদ্বেগ শুধু বিএনপির পরিবারগুলোতেই বিরাজ করছে না, সাধারণ ভোটাররাও অজানা আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত হয়ে আছে।’
‘গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ মধ্যযুগীয় কায়দায় পণ্ড করে, সাংবাদিকসহ নেতাকর্মীদের পৈশাচিকভাবে নিহত, আহত, জখম করেছে শেখ হাসিনা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তার সুসজ্জিত দলীয় ক্যাডাররা’, যোগ করেন তিনি।
‘চলতি বছরের ১১ মাসে ২৯৬ জন সাংবাদিক খুন, হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন’ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘গত দেড় দশকেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ অসংখ্য সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।’
রিজভী বলেন, ‘শুধু ট্র্যাজেডির পর ট্র্যাজেডি। শেখ হাসিনার শাসনকাল এটাই দিয়েছে উপহার, আর অন্য কিছুই উপহার দেয়নি। ফ্লাইওভারের কথা বলেন, মেট্রোরেলের কথা বলেন—এই টাকা তো গেছে কানাডায়, এই টাকা তো গেছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। সেখানে এই আওয়ামী লীগের যারা মন্ত্রী আছেন, নেতারা আছেন, তাদের পরিবারের লোকরা কত শান্তিতে স্বর্গরাজ্য বানিয়ে আরামে আছেন, সেটা সবাই জানে। আর তাদের অনাচারের বিরোধিতা যারা করেছে, তাদের পরিণাম হচ্ছে মৃত্যু না হয় কারাগার।’
সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের তথ্য উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৩০ জন, মামলা হয়েছে ১০টি, এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৯৮৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, আহত হয়েছেন ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী, মৃত্যু হয়েছে একজনের।’
বিএনপির ডাকা সর্বশেষ ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন চলছে আজ। এই অবরোধ কর্মসূচি ‘সফল’ভাবে পালিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করে রিজভী।