সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে মৌতলার আশ্রয়ন প্রকল্পের অন্যের নামে বরাদ্দকৃত ছয়টি ঘর জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও একজনের নামে বরাদ্দকৃত ঘরে বসবাস করছেন অন্যরা। আবার অবৈধভাবে বিক্রি ও হস্তান্তর করা হচ্ছে ঘর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভূমি ও গৃহহীনদের আবাসস্থল নিশ্চিতকরণে প্রায় দুই বছর আগে কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের কাজীপাড়া এলাকায় ২৯ ভূমিহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। সে সময় ভূমিহীন ওই পরিবারের প্রধানের নামে দুই শতাংশ জমির রেজিস্ট্রি দলিলসহ ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ঘর বরাদ্দ পেয়েও অনেক পরিবার দুই বছর সেখানে বসবাস করেনি। আবার কয়েকটি পরিবার নিজেরা বসবাস না করে স্বজনদের রেখে দিয়েছেন তাদের ঘরে। অনেকে সরকারি নিয়ম অমান্য করে বিক্রি ও হস্তান্তর করেছেন তাদের ঘর।
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর জবরদখল শুরু হয়। এ পর্যন্ত জবরদখল করা হয়েছে ছয়টি ঘর। সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর মৌতলা ইউনিয়নের চরসোনাইঘোরামী পাড়ার জমির সরদারের ছেলে ভূমিহীন আব্দুল কাদের নামে বরাদ্দকৃত ঘরের তোলা ভেঙে দখল করে সেখানে বাবাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন মৌতলার মীরপাড়া গ্রামের মীর লিটনের স্ত্রী রাবেয়া পারভীন। ঘরটির মূল মালিক আব্দুল কাদেরের নামে বরাদ্দকৃত ওই ঘরে বসবাস করতেন তার প্রতিবন্ধী শ্যালিকা।
আব্দুল কাদের জানান, তার শ্যালিকা ওই ঘরে বসবাস করতো। কিন্তু ৫ দিন আগে তার শ্যালিকা বাবার বাড়ি বেড়াতে গেলে সেই সুযোগে ঘরের তালা ভেঙে দখল করে নিয়েছে রাবেয়া পারভীন। এমনকি তাদের ব্যবহৃত আসবাবপত্র জবরদখলকারীরা রেখে দিয়েছে।
তবে ঘর দখলকারী রাবেয়া পারভীনের দাবি, ঘরটি খালি থাকায় তিনি তালা ভেঙে সেটি দখল করে নিয়েছেন। তাদের ব্যবহৃত আসবাবপত্র নষ্ট করেনি। ঘরের ভেতরে রেখে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এছাড়া পিরোজপুর এলাকার হাবিবুর রহমানের নামের বরাদ্দকৃত ঘর গত ৫ আগস্টের পরে জোরপূর্বক দখল করে বসবাস করছেন কাটাখালী গ্রামের শেখ আনারুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মাহফুজা আক্তার মীম। পিরোজপুর এলাকার হান্নান হোসেনের ঘর জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন মৌতলা মীরপাড়া এলাকার আরিজুল হকের ছেলে মিজানুর রহমান। চরসোনাইঘোরামী পাড়ার ফরিদা খাতুনের ঘর দখল করে সেখানে বসবাস করছেন ভূমিহীন আরিতুন নেছা। আলেয়া খাতুনের ঘর দখল করে বসবাস করছেন খুলনার বাবুল হোসেন ও তার স্ত্রী ইসমত আরা।
মৌতলা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রহমান আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছয়টি ঘর জোরপূর্বক দখল করে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে সাতটি পরিবার নিজেরা বসবাস না করে তাদের স্বজনদের বসবাস করতে দিয়েছেন। একে অপরের সাথে ঘর বিনিময় করে নিয়েছে দুইটি পরিবার। ঘর বিক্রির বিষয়ে অবগত নন জানিয়ে তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর জবরদখলসহ সকল বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার অমিত কুমার বিশ্বাস জানান, সার্বিক বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/ টিএ