খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

একই‌দিন নাগরিকত্ব ত্যাগ ও বাংলা‌দে‌শে স্থায়ী বসবা‌সের অনুম‌তি পায় এস আলম প‌রিবার

গেজেট ডেস্ক

ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এসব সুবিধা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থ পাচারের পথ সহজ করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জবাবদিহি এড়াতে এমন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এস আলস পরিবার যেদিন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন, সেইদিনই আবার বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন। নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ বাংলাদেশে জটিল প্রক্রিয়া হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই দিন সন্ধ্যায় অতি গোপনে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই কাজটি করা হয়।

তবে নাগরিকত্ব ত্যাগ ও আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হলেও কীভাবে একই দিনে দুটি কাজ সম্পন্ন হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

এস আলম পরিবারকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতির নথিতে স্বাক্ষর করা মো. খায়রুল আলম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনপত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম এবং আসাদুল আলম মাহির বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের এই সুবিধা অর্জনের সুযোগ বা প্রয়োজন নেই। নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বলেই তারা স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলেও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে এস আলম পরিবারের সদস্যরা জনপ্রতি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ডলার।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এস আলম ও তার পরিবার এমন কোন দেশে নাগরিকত্ব নিয়েছেন যে দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদিত নয়। আবার তিনি পরিবারসহ বাংলাদেশের স্থায়ী আবাসিক সুবিধা নিয়েছেন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে, এটা নিশ্চিত। বাংলাদেশে বিদেশি কেউ বিনিয়োগ করলে যে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, তা এড়াতেই এস আলমের পরিবার এই পন্থা অবলম্বন করেন। একই সঙ্গে দুই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার মাধ্যমে অনেকে অর্থ পাচার করেন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যদি কেউ বিদেশি বিনিয়োগ করে তবে তাকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। বিনিয়োগের পরিমাণ হিসেবে কমপক্ষে ৭৫ হাজার হাজার মার্কিন ডলার হতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভারী শিল্পে বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ ছাড়াও বিনিয়োগের ছাড়পত্র দেয়- এমন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সনদ প্রয়োজন হয়।

সর্বোপরি পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের অনেকেই বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে তাদের এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, স্থাবর সম্পত্তির বিক্রির সুবিধার্থে অনেকেই দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। অনেকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতিও গ্রহণ করে থাকেন।

এস আলম পরিবারের সদস্যদের স্থায়ী বসবাসের পৃথক অনুমোদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বাসিন্দার মতো সব অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতার অধিকারী হবেন এবং বাংলাদেশের নাগরিকের মতোই দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকবে। তবে সরকার কর্তৃক অর্পিত বা পরিত্যক্ত ঘোষিত কোনো সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না। বাংলাদেশে শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত অর্থ আবেদনকারী তাহার স্বদেশে অথবা বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে ফেরত বা প্রেরণ করিতে পারবে না, অন্যথায় তার স্থায়ী আবাসিক সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।’

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব আলীমুন রাজীব বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, বিনিয়োগকারী হিসেবে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা দেওয়া হয়। যদি কোনো বিদেশি নাগরিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ বাংলাদেশে করে, তবে তাকে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বাংলাদেশের কেউ নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে তিনিও বিনিয়োগকারী হিসেবে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা পেতে পারেন।’

এস আলম পরিবারের মালিকানায় রয়েছে ৫৬টি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বিগত সরকারের আমলে ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এস আলম গ্রুপ। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম এবং ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তার ছেলে আহসানুল আলম। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে সরকার।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!