খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ কার্তিক, ১৪৩১ | ৩১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৫৪
  দ্রুতই সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় স্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা

গেজেট ডেস্ক

প্রতি বছরই বেড়ে যাচ্ছে ঋণ পরিশোধের ব্যয়। বলা চলে, ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে জাতীয় বাজেট। বাজেটের আকার বড় হচ্ছে। বাড়ছে সরকারের ব্যয়। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে ঘাটতি বাজেট। আর এ ঘাটতি মেটাতে নিতে হচ্ছে দেশী-বিদেশী ঋণ। এতে প্রতি বছরই ঋণ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ঋণের সুদ। আবার এ সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে ঋণ নিয়ে। আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য প্রস্তাবিত পরিচালন বাজেটের বেশির ভাগ অর্থাৎ ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধে, যা চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৮০ হাজার ৩৯৪ কোটি টাক। এ সুদ ব্যয় অনুন্নয়ন বাজেটের একক খাত হিসাবে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৯ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ছিল ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। এ হিসাবে এক বছরে ঋণ পরিচর্চা বাবদ সুদব্যয় বাড়ছে ১৪ হাজার ১ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ। আর গত ৭ বছরের ব্যবধানে সুদব্যয় বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারের রাজস্ব ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু যে হারে ব্যয় বাড়ছে সেই হারে আয় বাড়ছে না। এতে বাজেট ঘাটতি বাড়ছে। আর বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতাও বাড়ছে। উচ্চ সুদে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পাশাপাশি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে সুদব্যয়। এটা অব্যাহত থাকলে সামনে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সুদ পরিশোধেই বাজেটের সমুদয় অর্থ ব্যয় করতে হবে। সঙ্কোচিত হয়ে যাবে উন্নয়ন বাজেট।

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার সামগ্রিক বাজেটের মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪ লাখ ১৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এ অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে শুধু ঋণের সুদেই ব্যয় হবে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা, যা একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৯ শতাংশ।

অনুন্নয়ন বাজেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হবে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন পরিশোধে ৮০ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা, শতকরা হিসাবে ১৬.৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও ঋণের সুদ মিলে ব্যয় হবে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। এক বছরে এ দুই খাতে বেড়েছে ২০ হাজার ৯৩ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা জানান, প্রতি বছরই সরকার বাজেটের আকার বাড়াচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আয় বাড়াতে পারছে না। এ কারণে ঋণ নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নে। ঋণ নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সুদব্যয়। যেমন, গত ৭ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদব্যয় বেড়েছে শত ভাগের বেশি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে সুদব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে ৭ অর্থবছরের বছরের ব্যবধানে তা বেড়েছে ৬১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে ১৮৫ ভাগ।

বিশ্লেষকরা জানান, চলতি অর্থবছরে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ে বিশাল অঙ্কের অর্থাৎ ৫ লাখ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতি বাজেট দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এ ঘাটতি বাজেটের পুরোটাই ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। এ ঋণের মধ্যে ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাক। আর ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি বাজেট অর্থায়নে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

এ দিকে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ধারের কাছেও যেতে পারবে না। এর ফলে চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও কঠিন হতে পারে। এটা হলে সরকারের ব্যয় ঠিক রাখতে আগামী অর্থবছর শেষে ব্যাংক ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ছেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে সুদব্যয় আরো বেড়ে যাবে। এটা কমাতে না পারলে সুদব্যয় পরিশোধেই বাজেটের বেশির ভাগ ব্যয় হয়ে যাবে।

খুলনা গেজেট/এসজেড




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!