খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ভারতের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তির ভিত্তিতে সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে : চিফ প্রসিকিউটর
  জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ১৩ জনের শুনানি চলছে
  শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার তদন্ত শেষ করা ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প

ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধে আরও দুই বছর সময় চায় ঢাকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও করোনা মহামারির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প-আরএনপিপির নির্মাণকাজ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ধীরগতি। এতে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি চালুর সময় পিছিয়েছে কমপক্ষে এক বছর। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ। তাই সরকার ঋণচুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি ও প্রথম কিস্তি পরিশোধে দুই বছর বাড়তি সময় চেয়েছে রাশিয়ার কাছে। গত মাসে রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-ইআরডি। চলতি মাসেই মস্কো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাতে পারে। এরপর রাশিয়া-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ঋণচুক্তি সংশোধন হবে। আরএনপিপি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ার রোসাটমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের মধ্যে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা) মূল্যের মূল চুক্তি সই হয়। ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও রাশান অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় আরএনপিপির জন্য রাশিয়া বাংলাদেশকে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার (৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা) ঋণ দেয়। এই ঋণের প্রথম কিস্তি ২০২৭ সালের ১৫ মার্চ দিতে হবে। এখন সময় বাড়িয়ে ঢাকা ২০২৯ সালের ১৫ মার্চ প্রথম কিস্তি দিতে চাইছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে ঋণ ব্যবহারের সময়কাল ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল সাত বছর ও ১০ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণ পরিশোধের সময় ৩০ বছর। বছরে দুটি কিস্তি ১৫ মার্চ ও ১৫ সেপ্টেম্বর পরিশোধ করতে হবে। চুক্তির সময়সূচি অনুসারে ২০২৭ সালের ১৫ মার্চ প্রথম কিস্তি পরিশোধ করার কথা রয়েছে। প্রতি কিস্তিতে ১৯ কোটি ডলার করে বছরে ঋণের আসল বাবদ প্রায় ৩৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, করোনা মহামারি, পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতি, যন্ত্রপাতি ও মালপত্র সরবরাহে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ধীরগতি বিবেচনায় ঋণচুক্তির মেয়াদ আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত দুই বছর বাড়ানো প্রয়োজন। আর কিস্তি পরিশোধ ২০২৯ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা প্রয়োজন। এতে আরও বলা হয়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রোসাটমকে অনুরোধ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিষয়টি দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলে। এরপর মার্চে অর্থ বিভাগে এ-সংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ইআরডি রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেবে। গত এপ্রিলে ইআরডি এ চিঠি পাঠিয়েছে।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার ঋণ পরিশোধে জটিলতা রয়েছে। অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে একটি নির্ভরযোগ্য অর্থ প্রেরণ পদ্ধতি বের করতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ রাশিয়ার পাওনা চীনা মুদ্রায় চীনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিশোধ করার চিন্তা করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি চীন সফরও করেছে।

আরএনপিপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চুক্তির শর্ত অনুসারে ২০২৪ সালের মধ্যে ঋণের টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে টানা দুই মাস প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। এরপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে যন্ত্রপাতি আনা, সরাসরি অর্থ বিনিময় বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কার্যক্রমও পিছিয়ে আছে। তাই প্রকল্প চালু হতে সময় লাগবে। আগামী ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়েছে। সময়মতো ঋণের অর্থ ব্যয় না হলে জরিমানা দিতে হবে। আর প্রকল্প চালু না হলে কিস্তি পরিশোধ বিঘ্নিত হবে।

রূপপুরে দুটি ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। সূত্র বলছে, মূল প্রকল্পের নির্মাণকাজ সূচি অনুযায়ী চলছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৭০ শতাংশ। খরচ হয়েছে প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা। প্রথম ইউনিটের পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ এখনও পিছিয়ে।

আরএনপিপির এক কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে সঞ্চালন লাইন পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কেন্দ্রের চুল্লিতে জ্বালানি স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, এতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা-আইএইএর অনুমোদন মিলবে না। সে জন্য পিছিয়ে থাকা সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একটি লাইন পরীক্ষামূলক চালু হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!