সাতক্ষীরায় উৎপাদন বাড়লেও দাম কমছে না শীতকালিন শাক সবজির। বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি থাকলেও কিনতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতারা। গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে অধিকাংশ শীতকালিন সবজির দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি। এতে করে বাজারে গিয়ে শীতকালিন সবজি কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলার নিম্ন আয়ের মানুষের।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি শীতকালিন মৌসুমে জেলায় সবজির আবাদ বেড়েছে অন্তত ১ হাজার হেক্টর পরিমাণ জমিতে। এদিকে ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, সাতক্ষীরার উৎপাদিত অধিকাংশ সবজি চলে যাচ্ছে জেলার বাইরে। ফলে স্থানীয় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল থাকায় ভরা মৌসুমে দাম কমছে না শীতকালিন শাক সবজির।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে জেলা সদরের সবচেয়ে বড় কাঁচা বাজারের আড়ৎ শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের কয়েকটি পাইকারি সবজির আড়ত ঘুরে জানা গেছে, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৪৫ টাকা, মেটেআলু ৫৫ টাকা, সিম ৪৫ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, ওলকপি ৩৮ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, টমেটো ৪৫ টাকা, নতুন আলু ৬৮ টাকা দরে। খুচরা বাজারে এসব সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০টা বেশি। গত বছর এসময় এসব সবজির দাম প্রায় অর্ধেক ছিল।
বাজারে সবজি ক্রেতা পুরাতন সাতক্ষীরার মোঃ শওকত হোসেন জানান, ভরা মৌসুমে বাজারে সবধরনের সবজির দাম বেশি। গত শীত মৌসুমে যে বেগুন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে ক্রয় করেছি খুচরা বাজার থেকে তা আজ ৬৫ টাকা দরে কিনতে হলো। একই ভাবে দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে সিম, ফুলকপি ও টমেটো। এখন চারিদিক থেকে বাজারে ফুলকপি ও সিম উঠছে অথচ প্রতি কেজি সিম কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা আর ফুলকপি ৫৫ টাকা দরে।
তিনি আরও বলেন, এসময় টমেটোর দাম কমতির দিকে থাকে। কিন্ত আজ পাইকারি বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। ওই টমেটো খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
অপর এক ক্রেতা ফেরদৌস হোসেন জানান, অন্যান্য শীত মৌসুমে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে তিন থেকে ৪ প্রকার সবজি কেনা যেত। বর্তমান ২৫০ থেকে ৩০০ টাকাতেও কুলানো যাচ্ছে না সবজির বাজার। বাজারে সবজির দাম বাড়তি থাকায় বাজার করতে এসে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস বেরিয়ে যাচ্ছে।
সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন জানান, পাইকারি বাজার থেকে সবজি কেনার পর কোন সবজি কেজিতে ৫ আবার কোনটা ১০ টাকা লাভে আমাদের বিক্রি করতে হয়। কেননা প্রতি কেজি মালে আড়ৎদারির পাশাপাশি বিক্রি শেষে কিছু পড়তি থেকে যায়। সে গুলো আবার কেনা দামের চেয়ে কমে বিক্রি করা লাগে।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছর এসময় বাজারে সবজির সরবরাহ আরও বেশি থাকে। তবে সাতক্ষীরায় উৎপাদিত সবজি জেলার বাইরের মার্কেটে চলে যাওয়ার কারণে এখানে সরবরাহ একটু কম। যে কারণে দামও বেশি। বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমে যাবে বলে জানান এই সবজি বিক্রেতা।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে জেলায় শীতকালিন সবজির আবাদ বেড়েছে। জেলার ৭টি উপজেলা ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর পরিমাণ জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে।
তিনি বলেন, গত মৌসুমে জেলায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর পরিমাণ জমিতে শীতকালিন সবজির আবাদ হয়েছিলো। সে অনুযায়ী চলতি মৌসুমে অন্তত ১ হাজার হেক্টর পরিমাণ জমিতে সবজির আবাদ বেড়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা মার্কেটিং অফিসার আবু সালেহ মোঃ আব্দুল্লাহ জানান, সবজিসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন শীত মৌসুমে বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ থাকে। জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং সদস্যরাও সবসময় বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে কাজ করছেন। অতিরিক্ত মুনাফার জন্য যে সব ব্যবসায়ী সবজির দাম বাড়তি নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম