খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত

উপকূলে আশা জাগানিয়া লবণ সহিষ্ণু ব্রি ধান-৬৭ চাষে ফুটে উঠেছে নিরাশা

শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা

সুন্দরবন উপকূলীয় লবণ পানির পাইকগাছায় ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে লবণ সহিষ্ণু ব্রি ধান-৬৭। তুলনামূলক শক্ত ও লবনাক্ত জমিতে উৎপাদন ভাল হওয়ায় প্রতি বছর এ জাতের ধানের আবাদ বাড়ছে। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ব্রি ধান-৬৭ এর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ২৩৪ হেক্টর জমিতে। গত বছর এজাতের আবাদ হয়েছিল মাত্র ৮৭০ হেক্টর জমিতে। মাত্র এক বছরে আবাদ বেড়েছে ৩৬৪ হেক্টর জমিতে। জনপদে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রি ধান-২৮ এ আকষ্মিক নেক ব্লস্ট’র আক্রমণে ফসলের সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে পক্ষান্তরে ব্রি-৬৭ ’র অবাধ উৎপাদন আগামী বছর ৩৫-৪০% বেশি জমিতে আবাদ বৃদ্ধির আশা করছে কৃষক ও কৃষি অধিদপ্তর।

কৃষি অধিদপ্তর জানায়, উপকূলীয় লবনাক্ত অঞ্চলে ধান চাষে আগ্রহ সৃষ্টিতে মূলত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট’র বিজ্ঞানীরা বোরো মৌসুমে চাষের জন্য ধানের লবণ সহিষ্ণু কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার মধ্যে ব্রি ধান-৬৭ অন্যতম। লবণাক্ততার মাত্রাভেদে এ ধানের হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৩.৮-৭.৪ মেট্রিকটন পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে জানানো হয়।

ব্রি ধান-৬৭ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য এর চারা অবস্থায় ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ১২-১৪ ডিএস মিটার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। অঙ্গজ বৃদ্ধি থেকে শুরু করে প্রজনন পর্যায় পর্যন্ত লবণাক্ততা সংবেদনশীল সকল ধাপে ৮ ডিএস মিটার লবণাক্ততা সহ্য করে ফলন দিতে সক্ষম। যা প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাত ব্রি ধান-২৮ পারে না। এর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৫০ দিন। ব্রি ধান-২৮ থেকে এর উৎপাদন ১.৫ মেট্রিকটন বেশি। এ ধানের চাল মাঝারি আকারের চিকন, ভাতও হয় সাদা ও ঝরঝরে।

পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী গত বোরো মৌসুমে উপজেলায় ৪ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র ব্রি ধান-২৮ এর আবাদের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৯৫ হেক্টর। যেখানে ব্রি ধান-৬৭ ছিল মাত্র ৮৭০ হেক্টর। অথচ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে চলতি মৌসুমে মোট আবাদকৃত ৫ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমির মধ্যে ব্রি ধান-৬৭ আবাদ হয়েছে ১ হাজার ২৩৪ হেক্টর। এমন পরিস্থিতিতে আগামী মৌসুমে ৩৫-৪০% ব্রি ধান ৬৭ জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এদিকে উপজেলার কোন কোন এলাকায় ব্রি ধান-৬৭ আবাদে ধরাশায়ী হয়েছেন কেউ কেউ। তাদের ক্ষেতে ধানের শীষ অত্যন্ত খর্বাকৃতির বেরিয়েছে। ফলে তাদের ফলনও তুলনামূলক অনেক কম। এমন অবস্থায় আগামীতে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই।

এব্যাপারে উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের সাহেব আলী বলেন, অনেক আশা নিয়ে এক একর জমিতে ব্রি ধান-৬৭ এর আবাদ করেছিলেন তিনি। তবে আশানুরুপ সাড়া পাননি বলে দাবি করে তিনি বলেন, তার ক্ষেতের ধান গাছ বড় হলেও শীষের দৈর্ঘ্য খুবই কম।

রেজাকপুরের মামুন জানান, তিনিও লবণ সহিষ্ণু ব্রি-৬৭ জাতের ধান রোপন করেছিলেন প্রায় ৪ বিঘা জমিতে। শুরুতেই ধানের যে ফলন হয়েছে তা দেখে রীতিমত আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।

যদিও স্থানীয় উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম বিষয়টি অস্বীকার করে বিষয়টি তার জানানেই বলে জানান।

অন্যদিকে কৃষি সচেতনতার আলোকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ এর উদ্যোগে উপকূলীয় বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে পানি সম্পদ ও মাটির লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ কর্মসূচির আওতায় মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকালে উপজেলার পুরাইকাটীতে ব্রি ধান-৬৭ জাতের প্রদর্শনীর উপর ফসল কর্তন ও কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজান কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান ড. আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয় সাতক্ষীরার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তাহমিদ হাসান আনছারি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ গাজীপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.মোঃ মনিরুজ্জামান, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।

মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে কৃষি কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা বলেন, আগামীতে লবণাক্ততার দরুণ দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের কোন জায়গা পতিত থাকবে না। নতুন নতুন এলাকায় ব্রি ধান-৬৭ জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশের সামগ্রীক উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ তুহিন এর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, গদাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম জিয়া, পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, প্রভাষক মইনুল ইসলাম, সহকরী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহাজান আলী, উপসহকরী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, বিল্লাল হোসেন, মিন্টু রায়সহ কৃষক-কৃষাণী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেনি-পেশার মানুষ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!