খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

উদ্ধার হয়নি শ্যামনগর থানার লুটকৃত অধিকাংশ আগ্নেয়াস্ত্র, উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর রাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের অধিকাংশই এখনো উদ্ধার হয়নি। ফলে এসব আগ্নেয়াস্ত্র অপরাধীদের হাতে চলে গেছে ভেবে উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে।

এদিকে ঘটনার পর প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলিসহ লুন্ঠিত অন্যান্য মালামাল জমা দেয়ার ক্ষেত্রে তেমন সাড়াও মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের ব্যবহৃত অস্ত্রের পাশাপাশি স্থানীয়দের জমাকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি ফিরে পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে লুট করা অস্ত্রের অধিকাংশই স্থানীয় অপরাধীদের কাছে পৌছে গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এসব অস্ত্র উদ্ধার না হলে সুন্দরবন ও সীমান্ত সংলগ্ন উপকূলীয় এ জনপদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

শ্যামনগরের বাধঘাটা গ্রামের শেখ আফজালুর রহমান জানান, ভারতে যাওয়ার পুর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পারিবারিক তিনটি বন্দুক ও রাইফেল থানায় জমা রাখেন। থানা থেকে লুট হওয়ার পর গত ১৪ দিনেও তিনি একটি অস্ত্রেরও সন্ধান পাননি।

আশিক হাসান বলেন, তার পিতার একমাত্র বন্দুকটি খোয়া গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ‘মুভমেন্ট’ না থাকায় অস্ত্র ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা দিনে দিনে ফিকে হচ্ছে বলেও তার দাবি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের দুই সদস্য জানান, আগুন দিয়ে দুবৃর্ত্তরা দ্রুত থানা ভবনের মধ্যে ঢুকে পড়ায় অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে দ্রুত তারা সীমানা প্রাচীর টপকে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করেন। এসময় নিজেদের ড্রয়ার ও ব্যাগে রক্ষিত অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে ব্যক্তিগত অস্ত্র লুট হয়। সরকারি এসব অস্ত্র খোয়ানোর কারণে তারা মানসিক পীড়ায় আছেন। ঋণের টাকায় কেনা মোটরসাইকেলের সন্ধান না পেয়েও হতাশ তারা।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের একটি বড় অংশ চলে গেছে অপরাধীদের হাতে। রাতে থানায় লুট হওয়ার সময় এলাকার চিহ্নিত অপরাধী, ডাকাত এবং আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যুদের কয়েকজনকে সেখানে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের একটি অংশ তারা নিয়ে গেছে। এসব লুটকৃত আগ্নেয়স্ত্র পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে ব্যবহার হতে পারে। যা শ্যামনগর উপজেলাবাসীর জন্য খুবই উদ্বেগজনক।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট দুস্কৃতিকারীদের দেয়া আগুনে পুড়ে যায় শ্যামনগর থানা ভবন। এসময় পুলিশ সদস্যরা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগে স্থানীয় দুবৃর্ত্তরা সমগ্র থানা ভবনজুড়ে ব্যাপক তান্ডব ও লুটপাট চালায়। থানাসহ পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত ব্যবহৃত জিনিসপত্র এমনকি আসবাবপত্রের পাশাপাশি থানার মালখানা ভেঙে সরকারি ও বেসরকারি অন্তত তিন শতাধিক ছোট-বড় আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে দুস্কৃতিকারীরা। এসময় বিভিন্ন অভিযানে আটকসহ পুলিশের ব্যবহৃত প্রায় দেড় শতাদিক নুতন পুরাতন মটর সাইকেল লুট হয়। প্লেট বাটি থেকে শুরু করে চাল ডাল এমনকি ফ্রিজ ফ্যান ও চেয়ার টেবিল পর্যন্ত লুটে নেয় তারা।

এদিকে ঘটনার চার/পাঁচ দিন পর অস্ত্র, গুলি এবং মটরসাইকেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ফিরিয়ে দেয়ার জন্য স্থানীয়দের উদ্যোগে মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়। লুটপাটের সময় থানা ভবনে অবস্থানকারী অনেককে নানাভাবে সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হলেও অধিকাংশ রয়ে গেছে অপরাধীদের হাতে। কাজে অস্ত্র উদ্ধারের কোন কৌশলই অদ্যবধি কাজে আসেনি। আবার পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে কোন ‘মুভমেন্ট’ না থাকার কারনেও অস্ত্রসহ লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারে তেমন কোন ইতিবাচক সাড়াও মিলছে না।

এমন পরিস্থিতিতে প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও অধিকাংশ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ পুলিশসহ স্থানীয় আগ্নেয়াস্ত্র মালিকদের মধ্যে উৎকন্ঠা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শ্যামনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, লুন্ঠিত অস্ত্রের খুবই সীমিত উদ্ধার হয়েছে, যা সরাসরি পুলিশ লাইনে জমা হওয়ায় সঠিক পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি। মটর সাইকেলসহ অন্যান্য মালামাল জমা দেয়ার কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। লুট হওয়া অস্ত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্রের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ পরবর্তীতে কাজ শুরু করবে বলে জানান তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!