আধুনিক ফুটবলের কিংবদন্তি ম্যারাডোনা বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে এবং শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আমরাও শোকাহত এই ফুটবলারের বিদায়ে। তিনি ছিলেন ফুটবলের এক আইকন, কিন্তু নিষ্কলঙ্ক ছিলেন না। তার খেলায় যে দক্ষতার প্রদর্শনী, গতি, চমৎকারিত্ব, আর খেলায় কখন কি ঘটতে পারে তা আগে থেকে বুঝে ফেলার ক্ষমতা ছিলো-যা ফুটবল ভক্তদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতো।
তিনি ১৯৮৬ ’র বিশ্বকাপে ফুটবল শিরোপা আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছেন প্রায় একার কৃতিত্বে। ইংল্যান্ডের বিরূদ্ধে ‘ঈশ্বরের হাত’ নামে সেই গোলের জন্য তিনি যেমন নিন্দিত হয়েছেন-তেমনি অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে কয়েকজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে বোকা বানিয়ে তার পরের যে গোলটি করেছিলেন তা এখনো সর্বকালের সেরা গোল বলে অনেকে মনে করেন।
ম্যারাডোনার-কিংবদন্তি ম্যারাডোনা হয়ে ওঠার কাহিনী অতটা সহজ ছিলো না। জীবনের নানা প্রান্তে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তাকে চলতে হয়েছে। মাদক মামলা, কর ফাঁকি মামলা থেকে শুরু করে বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। তারপরও বলতে হয় ৬০ বছর আগে বুয়েন্স আয়ারসে দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই ফুটবলের সুপারস্টার দারিদ্রের জাল থেকে বেরিয়ে এসে আর এক কিংবদন্তি পেলেকে পেছনে ফেলে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম ফুটবলার হয়েছিলেন।
এক নজরে ম্যারাডোনার দিকে তাকালে দেখা যায় ম্যারাডোনা ৪১১ টি ম্যাচে ২৫৯ টি গোল করেছেন। অল্প বয়সে লোস কাবালিও যুব দলের খেলার সময় তার নৈপূণ্যে ১৩৬টি ম্যাচ তার দল অপরাজিত থাকে। মাত্র ১৬ বছর ১২০ দিনে তার আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয়। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা খর্বকার এই খেলোয়াড়ের বল নিয়ন্ত্রণ, ড্রিবলিং দক্ষতা এত সমৃদ্ধ ছিল পাস দেবার ক্ষমতা তা না দেখলে মনে হবে তিনি অন্য গ্রহের মানুষ।
আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি ৯১টি ম্যাচ খেলে ৩৪টি গোল করেন। ১৯৮৬ তে বিশ্বকাপ জয় ছাড়াও ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ৩৭ বছর বয়সে ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার আগে আর্জেন্টিনার বোকা জুনিয়র্স, স্পেনের বার্সেলোনা, ইতালির ক্লাব নাপোলির হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। ক্লাব ফুটবলের তার সেরা খেলাটা ইতালীর নাপোলিতে। তাঁর সুবাদে ১৯৮৭ ও ১৯৯০ নাপোলি সিরিআ শিরোপা লাভ করে। আর উয়েফা কাপ জেতে ১৯৮৩ সালে। এই খেলোয়াড়ের জন্ম ৩০ অক্টোবর ১৯৬০। আর চলে গেলেন ২৫ নভেম্বর ২০২০।
মৃত্যুর সময় কিংবদন্তি এই ফুটবলারের সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ৮৫ লাখ টাকার মতো। কিন্তু একটু পিছনে তাকিয়ে দেখলে দেখা যায় ক্যারিয়ারের শীর্ষে বিশ্বের সর্বাধিক বেতনের খেলোয়াড় ছিলেন ম্যারাডোনা। সারা জীবনে আয় ও করেছেন বিপুল। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে খুব বেশি সম্পদ ছিল না ফুটবলের এই কিংবদন্তির।
নাপোলীর সঙ্গে চুক্তির সময় ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের বাণিজ্যিক দূত হয়ে ১ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেন। মেক্সিকোর একটি ক্লাবের কোচ হিসেবে প্রতি মাসে বেতন নিতেন ১১ হাজার মার্কিন ডলার।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন/এমএম