ভোজন রসিকদের জন্য কোরবানির ঈদ মানেই ভুরি ভোজের মহোৎসব। ঈদ উপলক্ষে বানানো নানা পদের বাহারি খাবার-দাবার দেখে অনেকেই লোভ সামলাতে পারেন না। কিন্তু আপনি যতই রসনা বিলাসী হোন না কেন, খাবার খেতে হবে পরিমিত। তবে রান্নাটাও হওয়া চায় যুৎসই। গরুর মাংসের আটটি সুস্বাদু পদ সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
কোরবানির ঈদ মানেই বাড়তি খানাপিনা। আর এইসব খানার প্রধান উপকরণই হলো গরু বা খাসি কিংবা মাহিষের মাংস। খাওয়াটা তখনই জমে যদি রান্নাটা ভালো হয়, যদি থাকে আইটেমে বৈচিত্র্য। ভোজন বিলাসীদের রসনাকে উসকে দিতে গরু ও খাসির মাংসের মজাদার ৮ টি রেসিপি তুলে ধরা হলো।
বিরিয়ানি
উপকরণ: মাংস দুই কেজি, পোলাও চাল এক কেজি, পেঁয়াজ কুঁচি দুই কাপ, আদা দুই চা চামচ, রসুন দুই চা চামচ, জয়ত্রী চার টুকরো, জায়ফল ১/২ টা, মাওয়া ২০০ গ্রাম, শাহিজিরা এক চা চামচ, কাঁচামরিচ ১২টি, তরল দুধ এক কাপ, টকদই এক কাপ, এলাচি ও দারুচিনি তিনটি করে, কাঠবাদাম ৫০ গ্রাম, কিশমিশ ৫০ গ্রাম, লবণ পরিমাণমতো, তেল ৩০০ গ্রাম, তেজপাতা চারটি।
প্রণালি: চাল ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একটি হাঁড়িতে পরিমাণমতো পানি ফুটিয়ে নিন। এবার চালগুলো ফুটানো পানিতে ঢেলে দিন। চাল আধাসিদ্ধ হলে নামিয়ে চালের পানি ঝরিয়ে বাতাসে রাখুন।
ছোট টুকরো করে মাংস ধুয়ে নিন। আরেকটি রান্নার পাত্রে তেল ঢেলে গরম করে পেঁয়াজ কুঁচির তিন ভাগের এক ভাগ তেলে দিয়ে নাড়–ন। বাকি পেঁয়াজ বেরেস্তা করে তুলে রাখুন। কিছুক্ষণ পর আদা ও রসুন বাটা দিন। মসলা নাড়তে নাড়তে অনেকটা বুন্দিয়ার মতো দানা হয়ে এলে বাকি পেঁয়াজ দিয়ে আবার নাড়–ন। এবার মাংস ঢেলে দিন। সে সঙ্গে টকদই, দুধ, জয়ত্রী, এলাচ, জায়ফল, দারুচিনি, মরিচ, কাঠবাদাম, মাওয়া, তেজপাতা, লবণ দিন। এ সময় মাংসটা ভালো করে নাড়তে হবে। মাংস পুরো সিদ্ধ হলে হাঁড়ি চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন।
এবার একটি হাঁড়িতে আধাসিদ্ধ চাল ও মাংসের স্তর করে পুরো মাংস ও আধাসিদ্ধ চাল তিন স্তরে রাখুন। সঙ্গে পরিমাণমতো লবণ দিন। হাঁড়িতে ঢাকনা দিয়ে চুলায় অল্প আঁচে রেখে দিন। ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে পুরো বিরিয়ানি উল্টেপাল্টে দিন। এরপর আবার আঁচে দিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর বেরেস্তা, কিশমিশ দিয়ে পরিবেশন করুন গরম বিরিয়ানি।
গরুর মেজবানি মাংস :
বিয়ের অনুষ্ঠানে বা রেস্টুরেন্টে গেলে খেতে পারেন গরুর মেজবানি মাংস। কিন্তু চাইলে এইে ঈদে আপনিও ঘরে তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু ও ঐতিহাসিক গরুর মেজবানি মাংস।
যা লাগবে : গরুর মাংস ২ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ ও মরিচ গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, ধনে ও জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, সরিষার তেল ১ কাপ, মাংসের মসলা ১ চা চামচ, টক দই ১ কাপ, কাঁচামরিচ ১০/১২টি, গোলমরিচ ১ চা চামচ, দারচিনি ও এলাচ ৫/৬টি, জয়ফল ও জয়ত্রী আধা চা চামচ, মেথি গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো।
যেভাবে করবেন : মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একটি পাত্রে মাংস, তেল, টক দই, হলুদ, মরিচ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, লবণ ও সব মসলা নিয়ে মেরিনেট করে রাখুন। অর্ধেক পেঁয়াজ তেলে ভেজে বেরেস্তা করে নিন। চুলায় হাঁড়ি বসিয়ে মেরিনেট করা মাংস কষাতে থাকুন। হাঁড়িতে ২ কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে আরো কিছুক্ষণ কষাতে হবে। মাংস থেকে পানি ঝরে গেলে মৃদু আঁচে মাংস সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
মাংসের পানি শুকিয়ে এলে কাঁচামরিচ, ধনে, জিরা গুঁড়া দিয়ে মৃদু আঁচে ১০ মিনিট দমে রেখে নামিয়ে পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন সুস্বাদু গরুর মেজবানি মাংস।
কাটা মসলায় বিফ ভুনা :
ঈদের দিন খিচুরী বা পোলাও দিয়ে গরুর মাংস ভুনা খাওয়ার কথা চিন্তা করলেই জিভে পানি এসে যায়। আর এই ভুনা মাংস যদি হয় কাটা মসলার ভুনা তাহলে তো কথাই নেই। ঈদের আনন্দ হয়ে যাবে দ্বিগুণ।
যা লাগবে : গরুর মাংস ১ কেজি, আদা বাটা ১ টেবিল চাচমচ, রসুন বাটা আধা টেবিল চামচ, জয়ফল ও জয়ত্রী আধা টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া সামান্য, দারচিনি, এলাচ, তেজপাতা ১/২ টি, শুকনো মরিচ কাটা ১৫/২০টি, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, টক দই আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, তেল পরিমাণমতো।
যেভাবে করবেন : টক দই দিয়ে মাংস আধা ঘণ্টা ভালো করে মেরিনেট করে রেখে দিতে হবে। চুলায় তেল গরম হলে মাংস ছেড়ে দিয়ে ভালো করে ভাজতে হবে। ভাজা হলে পেঁয়াজ কুচি ও শুকনো মরিচ দিতে হবে। এবার সব মসলা মাংসে দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে একটু পানি দিয়ে দমে বসিয়ে রাখতে হবে। মাংসের ওপর তেল ভেসে উঠলে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন কাটা মসলায় বিফ ভুনা।
গরুর কালা ভুনা :
গরুর মাংসের এই মজার খাবারটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন। তবে এর আসল রেসিপি জানেন না অনেকেই। ঐতিহাসিক এই লোভনীয় খাবারটি এই ঈদে আপনার খাবারের মেনুতে নিয়ে আসতে পারে টুইস্ট।
যা লাগবে : গরুর মাংস দেড় কেজি, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা আধা চা চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া আধা টেবিল চামচ, এলাচ, দারচিনি , তেজপাতা কয়েকটি, গরম মসলা গুঁড়া আধা চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো, সরিষার তেল পরিমাণমতো, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ।
যেভাবে করবেন : গরুর মাংসের সঙ্গে সব উপকরণ এক সঙ্গে মেখে রান্না করুন। মাংস সিদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে এলে লোহার কড়াই এ সরিষার তেলে হালকা আঁচে মাংস কালো করে ভেজে তুলে নিন।
গরুর মাংসের মজাদার রান্না গুলো আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তাহলে আর দেরি না করে এখনি প্রস্তুতি নিন রান্না করার জন্য। কারণ ঈদ আসন্ন।
নেহারি
উপকরণ: গরু অথবা খাসির পায়ের নিচের অংশ দুই কেজি, পেঁয়াজ কুঁচি এক কাপ, আস্ত রসুন কোয়া আধাকাপ, আদা বাটা এক টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ পাঁচ থেকে ছয়টি (কুঁচি), তেজপাতা দুই থেকে তিনটি, ছোট এলাচ চার থেকে পাঁচটি, বড় এলাচ দুটি, স্টার মসলা দুটি, লবঙ্গ ১০ থেকে ১২টি, দারুচিনি দুই থেকে তিন টুকরো, শুকনো মরিচ গুঁড়ো এক টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়ো আধা চা চামচ, ধনে গুঁড়ো এক টেবিল চামচ, লবণ এক টেবিল চামচ অথবা স্বাদমতো, তেল আধা কাপ, গোলমরিচ ২০টি, পাউরুটি দুই টুকরো, পোস্ত বাটা এক টেবিল চামচ, বাদাম বাটা দুই টেবিল চামচ।
বাগারের উপকরণ: তেল এক থেকে চার কাপ, পেঁয়াজ আধা কাপ (কুঁচি), রসুন কুঁচি এক টেবিল চামচ, শুকনো মরিচ চার থেকে পাঁচটি, আদা কুঁচি এক চা চামচ, গরম মসলা আধা চা চামচ, ভাজা জিরার গুঁড়ো আধা চা চামচ।
প্রণালি: গরুর পায়ের টুকরো পোস্ত বাটা ও বাদাম বাটা বাদে বাকি সব মসলাসহ ছয় কাপ পানি দিয়ে এক ঘণ্টা চুলায় রাখুন। পাউরুটির চার পাশের শক্ত অংশ ফেলে পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে নিন। এক ঘণ্টা পর ঢাকনা খুলে আরেকটি ছড়ানো পাত্রে ঢালুন মসলাসহ পাগুলো। পাত্রটি চুলায় দিয়ে পোস্ত বাটা ও বাদাম বাটা দিন। পেঁয়াজ গলে যাওয়া পর্যন্ত ভালো করে কষান। কিছুক্ষণ পর দুই কাপ পানি দিন। পানিতে ভেজানো নরম পাউরুটি আধা কাপ পানিতে পেস্ট তৈরি করে অল্প করে দিন হাঁড়িতে। চুলার আঁচ কমিয়ে দিন।
আরেকটি কড়াইয়ে বাগারের জন্য তেল দিন। পেঁয়াজ কুঁচি ভেজে নিন। পেঁয়াজের রঙ বাদামি হয়ে এলে রসুন কুঁচি দিন। ভালো করে নাড়ুন। আদা কুঁচি ও শুকনো মরিচ দিন। পেঁয়াজ বেরেস্তা হয়ে গেলে দুই চা চামচ নেহারির ঝোল দিয়ে ঢেকে দিন প্যান। দুই মিনিট পর ঢাকনা খুলে বাকি নেহারিটুকু ঢেলে দিন। বলক উঠলে গরম মসলার গুঁড়ো ও জিরার গুঁড়ো দিয়ে ঢেকে দিন। চুলার আঁচ কমাবেন না। পাঁচ মিনিট পর চুলা বন্ধ করুন। পেঁয়াজ বেরেস্তা ও ধনেপাতা কুঁচি দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার নেহারি।
কলিজা ভুনা
উপকরণ: কলিজা এক কেজি, কাটা পেঁয়াজ দুই কাপ, আদা বাটা দুই চা চামচ, রসুন বাটা দেড় টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়ো এক চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো আধা চা চামচ, জিরা বাটা আধা চা চামচ, ধনে গুঁড়ো এক চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, দারুচিনি চার টুকরো, এলাচ ছয়টি, লবঙ্গ চারটি, গরম মসলা গুঁড়ো আধা চা চামচ, তেজপাতা দুটি, টালা মনলা গুঁড়ো দুই চা চামচ (এতে গরম মসলাসহ জিরা, ধনে, শুকনো মরিচের ভাজা গুঁড়ো থাকে), কাঁচামরিচ সাত থেকে আটটি।
প্রণালি: প্রথমে কলিজা ছোট করে কেটে ধুয়ে নিন। বাড়িতে উচ্চ রক্তচাপের রোগী থাকলে সেদ্ধ করে কলিজার পানিও ফেলে দিতে পারেন। চুলায় তেল দিয়ে গরম হয়ে এলে এতে আস্ত গরম মসলা দিয়ে ভেজে নিয়ে কলিজা ছাড়–ন। এরপর পেঁয়াজ ছাড়া সব মসলা ছেড়ে দিয়ে ৩০ মিনিট কষিয়ে নিন। কষানো শেষে তেল ওপরে উঠে এলে এতে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ দিয়ে অল্প আঁচে ঢেকে দিন। ১৫ মিনিট পর টালা মসলা দিয়ে নামিয়ে নিন।
খুলনা গেজেট/এনএম