খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  শব্দ দূষণের চূড়ান্ত বিধিমালা চলতি মাসে প্রকাশ : পরিবেশ উপদেষ্টা
  রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ারের জানাজা সম্পন্ন, দাফন হবে বনানী কবরস্থানে
  আ. লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হলেও চরিত্র বদলায়নি : জামায়াত আমির

ইসলামে আজানের গুরুত্ব ও ফজিলত

মো. আব্বাস আলী

আজান ও মুয়াজ্জিন মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত। আজানের জবাব যে দিবে সেও আল্লাহর কাছে প্রিয়। আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (রহ.) আবদুল্লাহ ইবন আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ সায়ীদ খুদরী (রা.) তাকে বললেন, আমি দেখছি তুমি বকরি চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালোবাস। তাই তুমি যখন বকরি চরাতে থাক বা বন-জঙ্গলে থাক তখন উচ্চকন্ঠে আজান দাও। কেননা, জিন, ইনসান বা যেকোনো বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শুনবে, সে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে স্বাক্ষ্য দিবে। আবূ সায়ীদ (রা.) বলেন, একথা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে শুনেছি। (বুখারী শরীফ- ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫৮২)।

আজানের জাবাব দেওয়াকে মহান আল্লাহ তায়ালা ওয়াজিব বা ফরজ করেননি। বস্তুত সাক্ষ্য দেওয়া সবারই কাজ নয়। অবিশ্বস্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হয় না। যার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে তার প্রিয় হতে হবে আর যিনি দেবেন তাকেও প্রিয় হতে হবে। যদি উভয়েই প্রিয় হয় তাহলে মহান আল্লাহপাকও তাদের সাক্ষ্য প্রিয় হিসেবে গ্রহণ করবেন। আর যদি প্রিয় না হয় তাহলে তাদের সাক্ষ্যও মহান আল্লাহপাকের দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। যে ব্যক্তি নিয়মিত আজানের জবাব দিতে থাকবে সে ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বমহূর্তে হলেও গুনাহমুক্ত হবে এবং মৃত্যুর পর মহান আল্লাহপাক তার সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন।

মুয়াজ্জিনের ফজিলত: রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের গর্দান সবচেয়ে উঁচু হবে’। (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৪)।
মুয়াজ্জিনের আজান ধ্বণির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সকল বস্তু তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে। ওই আজান শুনে যে ব্যক্তি নামাজে যোগ দিবে, সে ২৫ ওয়াক্ত নামাজের সমপরিমাণ নেকি পাবে। মুয়াজ্জিনও উক্ত মুসল্লির সমপরিমাণ নেকি পাবে এবং তার দুই আজানের মধ্যবর্তী সকল (সগীরা) গুনাহ মাফ করা হবে’। (নাসাঈ, আহমাদ, মিশকাত হা/৬৬৭)।
যে ব্যক্তি ১২ বছর যাবৎ আজান দিল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। তার প্রতি আজানের জন্য ৬০ নেকি ও এক্বামতের জন্য ৩০ নেকি লেখা হয়’। (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬৭৮)।

আজানের জবাবের ফজিলত: আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.) আবূ সায়ীদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা আজান শুনতে পাও তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তার অনুরুপ বলবে। (সহীহ বুখারী শরীফ-ইসলামিক ফাউন্ডেশন: হাদিস/৫৮৪)।

ইবনুস (সারহ রহ.) আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) হতে বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর বলেন, এক ব্যক্তি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! মুয়াজ্জিনরা তো আমাদের ওপর ফজিলত প্রাপ্ত হচ্ছে (আমাদের চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী হচ্ছে)। আমরা কিভাবে তাদের সমান সওয়াব পাব? তিনি বলেন, মুয়াজ্জিনরা যেরুপ বলে, তুমিও তদ্রুপ বলবে। অত:পর যখন আজান শেষ করবে, তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে তুমিও তদ্রুপ সওয়ার প্রাপ্ত হবে। (সহীহ আবু দাউদ- ইসলামিক ফাউন্ডেশন: হাদিস/৫২৪)।

মুহাম্মাদ ইবনুল মুছান্না (রহ.) উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন মুয়াজ্জিন আজানের সময় আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলবে, তখন তোমরাও আল্লাহু আকবার বলবে। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে তখন তোমরাও আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে তখন তোমরাও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ বলবে তখন তোমরা বলবে, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলবে তখন তোমরা বলবে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন আল্লাহু আকবার বলবে তখন তোমরা আল্লাহু আকবার বলবে, অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তখন তোমরাও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। তোমরা যদি আন্তারিকভাবে এরুপ বল তবে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।(সহীহ আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: হাদিস/৫২৭)।

আজানের জবাবের দোয়া: আজানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বে। অতঃপর আজানের দোয়া পড়বে।

আজানের দোয়া: ‘আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাহ ওয়াস্বলা-তির ক্ব-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাজ্বীলাহ, ওয়াব’আছহু মাক্ব-মাম মাহঃমূদানিল্লাযী ওয়া’আত্তাহ। ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিয়াদ। অতঃপর পর বলবে, ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। রযীতু বিল্লাহি রব্বা ওয়া বিমুহাম্মাদির রসূলা, ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা।’

মুহাম্মাদ ইবন সালামা (রহ.) আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি নবী করীমকে (সা.) বলতে শুনেছেন, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শুনবে তখন সে যেরুপ বলে, তোমরাও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর তোমরা (আজান শেষে) আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওসীলা প্রার্থনা কর এবং ওসীলা হলো জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান। আল্লাহ তাআলার একজন বিশিষ্ট বান্দা ওই স্থানের অধিকারী হবেন এবং আমি আশা করি আমিই সেই বান্দা। অতঃপর যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসীলার দোয়া করবে তার জন্য শাফাআত করা আমার ওপর ওয়াজিব হবে। (সহীহ আবু দাউদ- ইসলামিক ফাউন্ডেশন: হাদিস/৫২৩)।

কুতায়বা ইবন সাঈদ (রহ.) ইবন আবু ওয়াককাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শুনার পর বলবে, ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু, রযীতু বিল্লা-হি রব্বা ওয়া বিমুহাম্মাদির রসূলা, ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা’ তার সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (সহীহ আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: হাদিস/৫২৫)।

আলী ইবন আইয়্যাশ (র.) জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আজান শুনে দোয়া করে, ‘আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাহ ওয়াস্বলা-তির ক্ব-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফায্বীলাহ, ওয়াব’আছহু মাক্ব-মাম মাহঃমূদানিল্লাযী ওয়া’আত্তাহ।’ কিয়ামতের দিন সে আমার শাফাআত লাভের অধিকারী হবে। (সহীহ বুখারী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: হাদিস/৫৮৭)।

সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শুনে বলবে, ‘ওয়া আনা আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু রাযীতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল-ইসলামি দীনান ওয়া বি মুহাম্মাদিন রাসূলান’ আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (সহীহ আত তিরমিযি হাদিস/২১০, সহীহ ইবনু মাজাহ হাদিস/৭২১)।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক
জিটি ডিগ্রী কলেজ, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!