খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

কোর্ট থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার বিচার বিভাগের জন্য কলঙ্কজনক : পাক প্রধান বিচারপতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা বিচার বিভাগের জন্য কলঙ্কজনক। বৃহস্পতিবার এমন মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল। এর আগে কমপক্ষে দুটি মামলায় হাজিরা দিতে মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাই কোর্ট চত্বরে উপস্থিত হন ইমরান খান। এ সময় তাকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে সহিংস বিক্ষোভে জ্বলতে থাকে দেশ।

ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তার দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টে। সেই আবেদন শুনানির জন্য তিন সদস্যের বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। এই বেঞ্চে আছেন প্রধান বিচারপতি নিজে, বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ এবং বিচারপতি মুহাম্মদ আলি মাজহার। এই বেঞ্চে শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি ওই মন্তব্য করেন। শুনানিতে ইমরান খানের আইনজীবী হামিদ খান আদালতকে জানান, অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন ইমরান খান।

সেখানে তার ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদালতের সংশ্লিষ্ট কক্ষে ঝড়ো গতিতে প্রবেশ করেন রেঞ্জার্সরা। তিনি বলেন, এ সময় ইমরান খানের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন তারা। তাকে গ্রেপ্তার করেন।

ইমরান খান কোন মামলায় জামিনের মেয়াদ বাড়াতে গিয়েছিলেন তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। বায়েমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার আগে কোন আবেদন করা যায় কিনা এ প্রশ্ন রাখেন বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ। জবাবে আইনজীবী জানান, ইমরান খান বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করাতে গিয়েছিলেন। কারণ, এটা না করে কোনো আবেদন দাখিল করা যায় না। সঙ্গে সঙ্গে বিচারক মিনাল্লাহ প্রশ্ন রাখেন। বলেন, জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরো (এনএবি) কেন আইন নিজেদের হাতে তুলে নিল? ইসলামাবাদ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে এনএবি গ্রেপ্তারের অনুমতি চাইলে সেটাই উত্তম হতো। তিনি আরও বলেন, প্রতিজন নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। সুপ্রিম কোর্টের অধিকার আছে তার বিধিবিধান নিশ্চিতের। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুশোচনা প্রকাশ করেন এই বিচারক।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালত চত্বর থেকে গ্রেপ্তারের ফলে আদালতের পবিত্রতা কোথায় গেল! তিনি আরও জানতে চান, ইমরানকে গ্রেপ্তার করেছেন কতজন রেঞ্জার্স। এবার জবাব দেন ইমরান খানের আরেক আইনজীবী সালমান সফদার। তিনি আদালতকে বলেন, পিটিআই চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল ৮০ থেকে ১০০ জন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, যখন আদালত চত্বরে ৯০জন লোক প্রবেশ করে, তখন আদালতের সম্মানের আর কি বাকি থাকে! আদালতকে অসম্মান করেছে এনএবি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আদালতের ভিতরে এখন আর কেউই নিজেকে নিরাপদ মনে করবেন না। তিনি বলেন, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট অথবা জবাবদিহিতা বিষয়ক কোর্ট থেকে কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায় না। ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আদালতের পবিত্রতাকে লঙ্ঘন করা হয়েছে।

এ পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন বিচারক মিনাল্লাহ। তিনি বলেন, এ ধরনের গ্রেপ্তার আদর্শ হয়ে উঠেছে কিনা এ বিষয়টি জানতে কেউ আর আদালতে আসবেন না। একজন ব্যক্তি যখন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন, তখন তাকে গ্রেপ্তার করা যায় না। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেন, এনএবি’র গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আইনগত বৈধতা এবং সম্মতির বিষয় রিভিউ করবে আদালত। আদালতে আত্মসমর্পণের অধিকারকে স্যাবোটাজ করা যায় না।

ইমরান খানের আইনজীবী সালমান সফদার আদালতকে অবহিত করেন যে, ‘সন্ত্রাসীদের টার্গেট লিস্টে’ নাম আছে ইমরান খানের। তার নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের সময় ঘটনাস্থলে এনএবির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। ইমরান খানকে রেঞ্জার্সরা যেভাবে গ্রেপ্তার করেছেন তার কোনো উদাহরণ নেই।

তখন বিচারপতি মিনাল্লাহ বলেন, দুর্নীতি বিরোধী এই সংস্থা (এনএবি) বছরের পর বছর বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে একই কাজ করে আসছে। এর আগে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইমরান খানের বিরুদ্ধে এনএবির’ গ্রেপ্তারকে বৈধ বলে ঘোষণা দেয়। এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে পিটিআই। প্রাথমিকভাবে এই আবেদনের বিরুদ্ধে আপত্তি জানায় রেজিস্ট্রার অফিস।

এরপর তা ফেরত পাঠানো হয় পিটিআইয়ের কাছে। রেজিস্ট্রার অফিস বলে, যথাযথ ফোরামে উপস্থিত হননি পিটিআই চেয়ারম্যান। তিনি একটি আন্তঃকোর্ট আপিল জানাতে পারতেন। তারা আরও বলে, যে আবেদন করা হযেছে, তাতে পিটিআই প্রধানের স্বাক্ষর পর্যন্ত নেই। পরে বুধবার রেজিস্ট্রার অফিসের বিরোধিতার কথা তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে পিটিআই। সুপ্রিম কোর্ট তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!