খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

রুশ আগ্রাসনে ইউক্রেন ছেড়েছেন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৩০ লাখ ইউক্রেনীয়। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ সেনারা। প্রথম পর্যায়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে এ অভিযান সীমিত রাখা হয়েছিল। এ কারণে পূর্বাঞ্চলের অনেক শহর থেকে অনেকেই ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভ ও তার আশপাশের শহরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

কিন্তু মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলেও রুশ বাহিনীর গোলাগুলি ও বোমাবর্ষণ শুরু হওয়ার পর বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও মলদোভায় আশ্রয় নিচ্ছেন বহু নিরুপায় ইউক্রেনীয়।

৪০ বছর বয়সী ঝান্না তাদেরই একজন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর এবং সাবেক সোভিয়েত আমলে দেশটির রাজধানী খারকিভে স্বামী-সন্তান ও শাশুড়িসহ বসবাস করতেন তিনি।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ঝান্না জানান, খারকিভে রুশ হামলা শুরুর পর সপরিবারে কিরোভোরাদ শহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। এই শহরটি পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভের কাছাকাছি।

ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী পোল্যান্ডের শেমিশেল শহরের এক রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘লভিভে হামলার আগ পর্যন্ত আমরা সবাই পশ্চিম ইউক্রেনকে নিরাপদ ভেবেছিলাম। এ কারণের খারকিভ থেকে কিরোভোরাদ এসেছিলাম।’

‘কিন্তু একসময় যখন লভিভ ও কিরোভোরাদে বোমাবর্ষণ শুরু হলো, তখন বাধ্য হয়ে সন্তান ও শাশুড়িসহ এখানে (পোল্যান্ডে) এসে আশ্রয় নিই। আমার স্বামী এখনও ইউক্রেনে আছেন।’

রোমানিয়া ও ইউক্রেনের সীমান্ত সিরেত সীমান্তেও গত কিছুদিন ধরে শরণার্থীদের স্রোত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাতের বেলা তাপমাত্রা যখন মাইনাস ২ ডিগ্রিতে নেমে যায়—তখনও স্যুটকেস, ব্যাপপ্যাকসহ শিশুদের কোলে নিয়ে ক্লান্ত পদক্ষেপে চলেন ইউক্রেনের নারীরা। শিশুদের অনেকের হাতেই হয়তো থাকে টেডিবিয়ার বা এ জাতীয় কোনো পুতুল।

অবশ্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোমানিয়ায় পৌঁছালে আপাতত নিশ্চিন্ত। কারণ, সেখানে শরণার্থীদের গ্রহণ ও তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন রোমানিয়ার দমকল বাহিনীর কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা।

কিন্তু এই যুদ্ধের কারণে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া ইউক্রেনীয়রা কী পরিমাণ মনোকষ্টে আছেন, তার আঁচ পাওয়া যায় ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিয়েকোলাইভ থেকে রোমানিয়ায় আশ্রয় নিতে আসা তানিয়ার কথায়।

রয়টার্সকে তানিয়া বলেন, ‘এখানে আসার সময় পুরো পথ আমি কাঁদতে কাঁদতে এসেছি; আমি আমার দেশকে ভালবাসি। আমি ইউক্রেনে বসবাস করতে চাই, কিন্তু তা আমি এবং আমার মতো অনেকেই তা পারছে না; কারণ, তারা (রুশ বাহিনী) সবকিছু ধ্বংস করছে।’

ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রুশ অভিযান শুরুর প্রথম দিকে যারা ইউক্রেন থেকে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগের হাতেই পর্যাপ্ত অর্থ ও পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোতে আশ্রয় দেওয়ার মতো বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন ছিল। কিন্তু বর্তমানে যারা শরণার্থী হিসেবে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগরই এই সুবিধা নেই।

ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা তাতিয়ানা শাবাক এ সম্পর্কে বলেন, ‘অনেক বয়স্ক ও শারীরিকভাবে পঙ্গু লোকজন এখন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন। এদের বেশিরভাগই আশা করেছিলেন, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে না।’

তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই যারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইউক্রেনে ফিরেও যাচ্ছেন। প্রতিবেশী দেশ মলদোভায় আশ্রয় নেওয়া ল্যুদমিলা তাদেরই একজন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমি একটি স্কুলে পড়াতাম। যে শহরে আমি থাকতাম, শুনলাম সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। তাই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এ রকম আরও একজন নারীর সঙ্গে কথা হয়েছে রয়টার্সের। শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ইউক্রেনে ফিরতি পথ ধরা সেই নারী বলেন, ‘আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চাই।’

 

খুলনা গেজেট/কেএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!