সমাবেশ নিয়ে দিনভর উত্তেজনার পর বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন তাদের কর্মসূচি এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার (২৮ জুলাই) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার রাতে দুপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) কর্মদিবসে যানজট এড়াতে দুটি সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে পুলিশের তরফ থেকেও আপত্তি ছিল।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বুধবার ঢাকায় মহাসমাবেশের জন্য স্থান ও অনুমতি চেয়ে প্রায় সারা দিনই পুলিশের সঙ্গে দেন-দরবার করেছে বিএনপি। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যেও দফায় দফায় আলোচনা করেছে। শেষ পর্যন্ত দলটি মহাসমাবেশের তারিখ এক দিন পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে দলটির কর্মসূচির তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে তিনটি কারণ রয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ সমাবেশ করবে শেরেবাংলা নগরে পুরোনো বাণিজ্যমেলার মাঠে। সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠে সমাবেশের পরিকল্পনা করলেও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় বৃহস্পতিবারের সমাবেশ পিছিয়ে শুক্রবার করবেন তারা।
অপরদিকে বিএনপি সূত্র জানায়, বিদেশি কূটনীতিক, ধরপাকড় এড়াতে ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পরামর্শে বিএনপি তাদের পূর্বনির্ধারিত মহাসমাবেশ এক দিন পিছিয়ে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার ছুটির দিনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুধবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি বরাবরই শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাই সরকার ও সরকারদলীয় বিভিন্ন বাহিনীর নানা উসকানি, এমনকি গত এক বছরে ২০ জন নেতাকর্মীর হত্যা ও অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতিত হওয়ার পরও সীমাহীন ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছে। এমনকি এ মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ও হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন হোটেল এবং সারা দেশে নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আমরা আশা করি শুক্রবারের কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা সৃষ্টি করবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘বিএনপি বরাবরই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে আসছে। বৃহস্পতিবারও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ জনদুর্ভোগের বিবেচনায় যে পরামর্শ দিয়েছে, সে কথা মাথায় রেখে কর্মসূচি এক দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বিদেশি বন্ধুদের পরামর্শ তো রয়েছেই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ইতিপূর্বে ছুটির দিন শনিবার কর্মসূচি পালন করে আসছিল। হঠাৎ করে গত তিনটি কর্মসূচি কর্মদিবসে করা হয়েছে। তখন পুলিশ অনুমতি দিয়েছে। তাই আবারও কর্মদিবসে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে পুলিশ এখনকার মতো আগে এমন সতর্ক অবস্থান নিলে বিএনপি কর্মদিবসে কর্মসূচি পালন করা থেকে বিরত থাকত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুলিশের মধ্যে একটি মহল গত বছর ৭ ডিসেম্বরের মতো অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা কার্যালয় ত্যাগ করেন। এর পরপরই কার্যালয়ের আশপাশে পুলিশ অবস্থান নেয়।’
এর আগে মহাসমাবেশ সামনে রেখে বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করে দলটির পক্ষ থেকে মহাসমাবেশ নিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার কথা ছিল। তবে বৈঠক শেষ না করে হঠাৎ করে নয়াপল্টন ছেড়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে চলে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে তিনিসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা কার্যালয় ছেড়ে যাওয়ার পর কার্যালয়ে অবস্থানরত অন্য নেতাকর্মীরা কার্যালয় ত্যাগ করেন। এরপর সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের দুই পাশের রাস্তায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ দুটি জলকামান ও একটি রায়ট কার নিয়ে অবস্থান নেয়।
আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ শীর্ষক সমাবেশের বিষয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠে সমাবেশ করতে চাইলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাইনি। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে শেরেবাংলা নগরে পুরোনো বাণিজ্যমেলার মাঠে সমাবেশ করতে বলা হয়। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, কর্মদিবসে সমাবেশ না করার যে সিদ্ধান্ত পুলিশ কর্তৃপক্ষ দিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানান তারা।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমানসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতারা গতকাল রাতে পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠ পরিদর্শনে যান।
গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠ ব্যবহার উপযোগী নয়। পূর্ত (গৃহায়ণ ও পূর্ত মন্ত্রণালয়) আমাদের কাছে এক দিন সময় চেয়েছে, সময় দিলে তারা মাঠটা ঠিক করে দিতে পারবে। এ কারণে আমাদের বৃহস্পতিবারের পূর্বনির্ধারিত শান্তির সমাবেশ শুক্রবারে নেওয়া হয়েছে।’
পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠে কয়েক দিন আগে বৃক্ষমেলা হওয়ায় খানাখন্দ হয়েছে বলে দাবি করেন সাচ্চু।
তিনি বলেন, এখানে খানাখন্দ ভরা, গর্ত। এক রাতের মধ্যে এগুলো ঠিক করা সম্ভব নয়। এ গর্তগুলো ভরাট করতে মাঠ ঠিক করতেই গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এক দিন সময় চেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ছিল ৩ থেকে ৫ লাখ ছাত্র- যুবকের সমাবেশ করা, মাঠটা আমাদের জন্য উপযোগী বলে আমি মনে করি, এখানে সবার একত্রিত হতে পারবে। সমস্যা হচ্ছে যারা বিভিন্ন জেলা থেকে আসবে তারা কিন্তু ইতিমধ্যে রওনা দিয়েছে। এখন কষ্ট হলেও তাদের বার্তা দিয়ে বলছি যে, আগামীকাল (আজ) নয়, শুক্রবার বিকেল ৩টায় সমাবেশ হবে। এ মাঠের অনুমোদন পেয়েছি।’
খুলনা গেজেট/কেডি