সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ নকল ও ভেজাল ঘি তৈরি করে বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এসব নকল ঘি তে ব্যবহার করা হচ্ছে সয়াবিন, ভেজিটেবল ফ্যাট, রাসায়নিক দ্রব্য ও কলার ফ্লেভার। এ সকল নকল ঘি খাওয়ার ফলে দ্রæত হজম শক্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষ লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সংশ্লিষ্ট একাদিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের শ্বেতপুর, শোভনালী ইউনিয়নের শোভনালী, কুল্যার কচুয়া, কাদাকাটি, দরগাপুরের শ্রীধরপুর, আশাশুনি, বড়দলের গোয়ালডাঙ্গা, শ্রীউলার নাকতাড়া, খাজরার কাপসান্ডা ও গদাইপুর, আনুলিয়া, প্রতাপনগর, ফিংড়ীর হাবাসপুর দরগাপুরের পাশ্ববত্তী বাঁকা, কাঠিপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে নকল ঘি তৈরির চক্র ও কারখানা। এ সকল কারখানায় উৎপাদিত ঘিয়ের কৌটায় নামী দামী কোম্পানির লেবেল লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হচ্ছে।
জানাগেছে, এসব এলাকার দুধ ও ঘি ব্যবসায়ীরা এক মন দুধ থেকে আট কেজি ছানা ও তিন কেজি ননী তৈরি করেন। তিন কজি ননী জ্বালিয়ে দেড় কেজি খাঁটি ঘি তৈরি করেন। অথচ অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় খাঁটি ঘিয়ের সাথে নানা উপকরণ মিশিয়ে ভেজাল ঘি তৈরী করে খাঁটি ঘি হিসাবে বাজারজাত করছে। এধরনের ঘি মিষ্টির দোকান ও মুদিখানায় বিক্রি হচ্ছে। এই ঘি কিনে ক্রেতা সাধারণ প্রতারিত হয়ে শুধু আর্থিক ক্ষতির শিকারই হচ্ছেন না মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকির মধ্যে পড়ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশাশুনির বিছট বাজারের একজন মিষ্টির দোকানী বলেন, নিদিষ্ট পরিমান সয়াবিন তেলের সাথে ১০ কেজি খাঁটি ঘি, পাঁচ কেজি গোল আলুর পেষ্ট, দুই কেজি ভেজিটেবল ফ্যাট ও কলার ফ্লেভার ভাল ভাবে মিশিয়ে নকল ঘি তৈরি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের দেখে বোঝার উপায় থাকে না এটা নকল কি আসল। এসব ভেজাল ও নকল ঘি বাহ্যিক ভাবে দেখে চেনার কোন উপায় থাকে না। ফলে না বুঝে অনেকেই এই ঘি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রতি কেজি নকল ঘি তৈরিতে ব্যয় হয় মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আর বাজারে ও ক্রেতা সাধারণের কাজে তা বিক্রি করা হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে। ফলে ভেজাল ঘি এর ব্যবসা করে এক শ্রেনির অসাধু ব্যবসায়ীরা রাতারাতি মোটা অংকের টাকার মালিক হয়েছেন। এ দিকে মানুষ এই ভেজাল ঘি কিনে প্রতারিত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ আরিফ আহম্মেদ জানান, খাঁটি ঘিয়ের গলনাংক থাকে ২৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। এর কম তাপ মাত্রায় জমাট না বাঁধলে বুঝতে হবে এতে ভেজাল রয়েছে। ২৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বেশী তাপ মাত্রায় ঘি জমে না। আসল ঘিয়ে পানি থাকবে শূন্য দশমিক একভাগ। ভোজ্য তেলের গন্ধ হয় তেঁতো এবং ঘিয়ের গন্ধ হবে চমৎকার।
ভেজাল ঘি খাওয়া মানে বিষ খাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল ঘি খাওয়ার ফলে লিভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দ্রæত কমে যেতে পারে হজম শক্তি, হতে পারে ক্যান্সারের মত প্রানঘাতি অসুখ। এসব ভেজালের বিরুদ্ধে এক্ষনেই ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে এর পরিনাম ভয়াবহ হবে বলে মন্তব্য করেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী কনসালটেন্ট ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ মনোয়ার হোসেন।