খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
সুচিত্রা-কবিতার ঘরে ফেরা হলো না

আম্ফানের পর কেটে গেল তিন মাস, বড় কষ্টে বেড়িবাঁধে তাদের বসবাস

আনিসুজ্জামান, কয়রা

‘বসবাসের ঘরবাড়ি নেই, বড় কষ্টে ওয়াপদার উপর কুঁড়েঘর বেঁধে আছি। তিন বেলা দু’মুঠো খাবার জোটে না। এক সাঁঝ (বেলা) খেলে দুই সাঁঝ না খেয়ে থাকি। কুঁড়ে ঘরে পানি পড়ে, রান্না করা খুব কষ্ট, ঝড়-বাতাস, বর্ষায় চুল্য়া পানি পড়ে। ত্রাণ সামগ্রী সব ভাঙনের দুই পাশে দেয়, যাদের প্রয়োজন নেই তারাই ত্রাণ পাচ্ছে, আমাদের নিয়ে তাদের কোন চিন্তা-ভাবনা নেই। চেয়ারম্যান-মেম্বররা আমাদের কোন খোঁজ-খবর নেয় না’- কথাগুলো এক নিমিশেই বললেন কয়রা উপজেলাধীন উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের হাজতখালি-কাশির হাটখোলার ভেড়িবাঁধের উপর কুড়েঘরে বসবাসরত মনোরঞ্জন সরকারের স্ত্রী সুচিত্রা সরকার (৪৫)।

শুক্রবার সকালে কয়রার রিং বাঁধ ভেঙে আবার তলিয়ে গেছে কয়রা সদর ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা। গত কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ায় নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে অতিরিক্ত পানির প্রবল চাপে গত ২০ আগস্ট সকালের জোয়ারে কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা হরিনখোলা ও ঘাটাখালী ভেড়িবাঁধের রিংবাঁধ ভেঙে লোকালয় লোনা পানিতে তলিয়ে যায় খবর পাওয়া যায়। তখনই উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এসএম শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এলাকাবাসী গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে রিংবাঁধ সম্পন্ন করে। কিন্তু রাতের জোয়ারে পূররায় রিং বাঁধ ভেঙে যায়। এ খবর পাওয়ার পরপরই সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস শুক্রবার (২১ আগস্ট) সকালে স্থানীয়দের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে পূনরায় রিংবাঁধ সম্পন্ন করেন। কিন্তু ভাগ্য বিপর্যয়। দুপুরের জোয়ারে আবারও রিংবাঁধ ভেঙে গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রিং বাঁধের ভাঙা স্থানগুলো দিয়ে নদীর লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এলাকাবাসির ধারনা শীঘ্র রিং বাঁধ সম্পন্ন করা না হলে কয়রা উপজেলা পরিষদসহ সমগ্র কয়রা উপজেলা নোনা পানিতে নিমজ্জিত হতে পারে। ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক মৎস্য ঘের, বসতঘর, নোনাপানিতে ভেসে গেছে।

প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় অঞ্চলের ভিটে-মাটি-বসতঘর হারিয়ে ইউনিয়নের হাজত-খালি কাশির হাটখোলা ভেড়িবাঁধে কুড়েঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে যারা, সুচিত্রা সেই ভাগ্যাহতদের একজন।

ট্রলার যোগে যাওয়ার সময় কথা হয় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের হাজতখালী গ্রামের মজিদ মোল্যার সাথে। দেখা যায় তার পানিতে ডুবে থাকা ঘরবাড়ি। সে ঘর-বাড়ির মধ্যেই মজিদ মোল্যা খাট দিয়ে মাচা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনযাপন করছে। ভগ্ন ঘরবাড়ি, কোন আয়-রোজগার নেই, সংসার চালানো খুবই কঠিন। যাতায়াতের কোন রাস্তা নেই, একটু পর ট্রলার থেকে গলা সমান পানিতে নেমে বড় কষ্টে মজিদ মোল্যা তার বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন। গত ২০ আগস্ট সরেজমিন পরিদর্শনে কথাগুলো প্রতিনিধির কাছে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন সুচিত্রা সরকার ও মজিদ মোল্যা।

শুধু সচিত্রা-মজিদ মোল্যা নয়, একই রকমভাবে তাদের কষ্টের কথা বলেন, ভেড়িবাঁধের কুঁড়েঘরে ও আসে-পাশে ডুবে যাওয়া বাড়ি-ঘরে পানির মধ্যে ইট দিয়ে খাট উচু করে বসবাসরত হাজতখালি গ্রামের অমূল্য বরকন্দাজের স্ত্রী গোলাপী বরকন্দাজ (৬৫), আবু সাইদ সানার স্ত্রী তহমিনা বেগম (৪২), মৃত আছির উদ্দিনের পুত্র জামাত সানা (৬৫), চারু সরকারের স্ত্রী যশোমতি সরকার (৪৫), আজগর গাজীর স্ত্রী করিমন্নেছা (৭০), রাজেন মণ্ডলের পুত্র ভরত মণ্ডল (৬২), হরেন সরকারের স্ত্রী প্রকৃতি সরকার (৪৫), নিমাই সরকারের স্ত্রী কবিতা সরকার (৬৫) সহ আরও অনেকে।

তারা বলেন, গত ২০ মে প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় আঘাত হানলে খুলনার কয়রা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ভেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে লোনা পানি প্রবেশ করে। জনপ্রতিনিধিদের চেষ্টায় ও এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে তিনটি ইউনিয়নের ভেড়িবাঁধে রিং বাঁধ দিয়ে আটকানো সম্ভব হলেও উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হাজতখালি ভেড়িবাঁধের ভাঙন আটকানো সম্ভব হয়নি। সেই থেকে দীর্ঘ তিন মাস ধরে জোয়ার-ভাটায় ভাসছে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। তার উপর গত কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ায় নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে লোনা পানির প্রবল চাপে ভেসে গেছে সমগ্র উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন। ভেঙে গেছে কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা হরিনখোলা ও ঘাটাখালি ভেড়িবাঁধের রিং বাঁধ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। কয়রায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!