খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুষ্টিয়ার খোকসায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিন শিশু নিহত, আহত দুই
  দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আম্পানে বিধ্বস্ত উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির বরাদ্দ আসবে কবে?

আশরাফুল ইসলাম নূর

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবের পর তিনমাসেও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বরাদ্দ মেলেনি। তাই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলের বেড়িবাঁধ আর সড়ক সংস্কার সহসাই হচ্ছে না। এরমধ্যে জোয়ারের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো ভাঙছে। কবে নাগাদ বরাদ্দ আসবে আর কবে এসব বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার হবে, তা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ! এভাবেই একটির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই, নতুন নামে উপকূলে ফের আঘাত হানে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়।

এদিকে, উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। গত ২০ আগস্ট বঙ্গোপসাগর উপকূলের নদীতে বিপদসীমার উপর দিয়ে জোয়ার প্রবাহিত হওয়ায় খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি ও বাগেরহাটের শরণখোলা এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনাপানি প্লাবিত হয়। এরমধ্যে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কয়রা উপজেলা সদর, উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে জোয়ার ভাটা চলছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, গত ২০ আগস্ট লঘুচাপের প্রভাবে জোয়ারে ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নোনা জলে প্লাবিত হওয়ায় সাড়ে ৮ হাজার পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন অনাহারে/অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে। তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে জরুরিভিত্তিতে জিআর ২৫ লাখ টাকা, জিআর চাল ৪০০ মেট্রিক টন এবং এক হাজার বান্ডিল ঢেউটিন চেয়েছি জেলা প্রশাসনের কাছে।

তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি বেশ খারাপ। ইউএনও কার্যালয় চত্বরও হাঁটুপানিতে তলিয়ে আছে। এই এলাকা ভাঙা-গড়ার মধ্যেই আছে। আম্পানে ভেঙে যাওয়ার পর যেসব জায়গায় রিংবাঁধ দিয়ে আটকানো হয়েছিল, জোয়ারে তা ভেঙে গেছে। মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে যে রিংবাঁধ দিয়েছিল, তা ছিল আপৎকালীন ব্যবস্থা। ওই বাঁধ জোয়ারের প্রবল চাপে ভেঙে গেছে। মানুষ আর স্বেচ্ছাশ্রমে কতবার বাঁধ দেবে। তারাও আর স্বেচ্ছায় শ্রম দিতে চাইছে না।

এ বিষয়ে পাউবো’র স্থানীয় সেকশন কর্মকর্তা মোঃ মশিউল আবেদীন জানিয়েছেন, অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। এটি অনুমোদিত হয়েছে বলে শুনেছেন, তবে বিস্তারিত কিছু জানেন না তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ২২ ও ২৩ মে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’র আঘাতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেড়িবাঁধ ও বিধ্বস্ত জনপদের ক্ষত এখনো দগদগে। তিন মাসেও মেরামত হয়নি বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ, সড়ক। বরং আমাবশ্যার প্রবল জোয়ার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত রিংবাঁধ ও দুর্বল বেড়িবাঁধ পুনরায় ভেঙেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে।

বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের তথ্যমতে, আম্ফানের তান্ডবে উপকূলের প্রায় ১৪৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় চলে যাবার পরপরই বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার ও ক্ষতি মোকাবেলায় বরাদ্দ চাওয়া হয়। তবে তা এখনো মেলেনি। তাই নিজস্ব উৎস থেকে চলছে সংস্কারের চেষ্টা। সেখানে বাড়তি দুশ্চিন্তা জোয়ার।
সূত্রটি আরও জানান, আম্পানে উপকূলের ৬২৯টি ইউনিয়নে ৮৫ হাজার ৮৫৪টি ঘরবাড়ী সম্পুর্ণ ও দুই লাখ ৮৬ হাজার ৩০৬টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সর্বশেষ ওই ঘূর্ণিঝড়ে ৯০ হাজার ১৩০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার নতুন করে প্রকল্প গ্রহন করেছে। আর মেরামত সেনাবাহিনীকে দিয়ে করাচ্ছেন। আর অন্যান্য মেরামতগুলো লোকাল রিসোর্স থেকে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে আমরা করিয়ে নিচ্ছি। সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দ এখনো আসেনি।’

একই অবস্থা উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের সড়ক মেরামতের ক্ষেত্রেও। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর খুলনা সার্কেলের তথ্যমতে- খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ৬০ কিলোমিটার। এগুলো মেরামতে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে দু’টি পৃথক প্রকল্প প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বল্প মেয়াদীতে অর্থ চাওয়া হয়েছে ৩৫ কোটি ১২ লাখ আর দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পের জন্যে দুইশ’ ২০ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

সওজ খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাশ বলেছেন, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের সড়কগুলো নিয়মিত সংস্কারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পের কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।


উপকূলের এ তিন জেলায় আম্ফানে নষ্ট হয়েছিল অন্তত ৯১ হাজার হেক্টর জমির ফসল। আর মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয় একশ’ ৩৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে অর্থ ছাড় না হওয়ায় প্রণোদনার বাইরে ক্ষতিগ্রস্তরা।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, আম্পানে অন্তত তিন কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছিল; সেই তালিকা করে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। এখন পর্যন্ত সেই অর্থ আমাদের আসেনি।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. আনোয়ার হোসেন জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহন করে কাজ শুরু হয়েছে। এখন বর্ষাকাল। যার কারণে এখন কাজটা করা যাচ্ছে না। এখন কাজ করলেও টেকসই হবে না। সেই কারণে কাজ একটু পিছিয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত্ব, এরআগে সর্বশেষ বিধ্বংসী আটটি ঘুর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে উপকূলে। সেগুলো হল- ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০০৮ সালের মে মাসে নার্গিস আঘাত হানে। এসব ঘুর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ। ঘরবাড়ী হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন বিপুল জনগোষ্ঠি। একটির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই, নতুন নামে উপকূলে ফের আঘাত হানে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!