খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা
  রাজধানীর হাজারীবাগে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে আহত কিশোরের মৃত্যু

আমেরিকার কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলায় বিশ্ব নেতাদের নিন্দার ঝড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটল-এ ট্রাম্প সমর্থকদের ঢুকে পড়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।

এ ঘটনায় বিস্মিত ও স্তব্ধ হওয়ার প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্বের রাজনৈতিক নেতারা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘটনাকে “লজ্জাজনক দৃশ্য” বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে “শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল ক্ষমতা হস্তান্তরের” আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, “ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের উচিত শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভোটারদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া এবং গণতন্ত্রের পদদলন না করা।”

এক বিবৃতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ বলেছেন, “এটা পুরোপুরি অসুস্থ এবং হৃদয়বিদারক দৃশ্য। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল কোন দেশে এ ধরণের ঘটনার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলকে বিতর্কিত করা হয়- আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে এর কোন স্থান নেই।”

এক বিবৃতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ইতিহাস সঠিকভাবেই ক্যাপিটলের উপর এই আক্রমণকে মনে রাখবে, আর সেটি হচ্ছে “এই মুহূর্তটি প্রচণ্ড অসম্মান এবং এই জাতির জন্য লজ্জাজনক।”

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, “গণতন্ত্রের উপর এই আঘাতের ঘটনায়” “কানাডিয়ানরা প্রচন্ড বিরক্ত”।

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্ন্দান্দেজ জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং সহিংসতার ঘটনার প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।

একইভাবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দোকে সহিংসতাকে প্রত্যাহার করে কংগ্রেসের সদস্যদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনেরা “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের” নিন্দা জানিয়েছেন।

গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি টুইটারে ঘটনার প্রেক্ষিতে লিখেছেন, ‘ওয়াশিংটন ডিসিতে সংঘর্ষ ও হিংসার ঘটনায় আমি অত্যন্ত আহত। নিয়মমাফিক ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যেন চলতে থাকে। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কখনই বেআইনি আন্দোলনের দ্বারা বেপথে চালিত হতে দেওয়া যায় না’।

“আজ একটি কালো দিন ছিল” বলেন পেন্স
সহিংসতার পরও সেনেটে অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে আজকের দিনটি একটি কালো দিন হিসেবে উল্লেখ থাকবে।”

এর আগে ভাইস-প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেছিলেন যে, হামলার সময়েও ক্যাপিটল হিল ছেড়ে যাননি পেন্স।

সেনেটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা পেন্স সব সময়ই কংগ্রেসের নেতৃত্ব, পুলিশ এবং বিচার ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন যাতে “ক্যাপিটলকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কংগ্রেস আবার শুরু করা যায়।”

পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, “যারা আজ ক্যাপিটলে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছেন, আপনার জয়ী হতে পারেননি।”

“সহিংসতা কখনো বিজয়ী হয় না। স্বাধীনতা বিজয়ী হয় এবং এটা এখনো জনগণের হাউজ। আমরা যেহেতু আবার এই চেম্বার শুরু করছি, বিশ্ব আবার একবার দেখবে যে, অভূতপূর্ব সহিংসতা এবং ভাংচুরের মধ্যেও আমাদের গণতন্ত্রের দৃঢ়তা এবং শক্তি কতটা মজবুত।”

“যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আবার একত্রিত হয়েছেন।”

রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, “আজকের এই অস্থির জনতা ছাড়াও মার্কিন কংগ্রেস এর চেয়ে অনেক বড় হুমকি মোকাবেলা করেছে।”

“তারা আমাদের গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করতে চেয়েছিল, তারা পারেনি, তারা পরাজিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বৈধতা দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।

ডেমোক্রেটিক সেনেটর চাক শুমার বলেন, “৬ই জানুয়ারিকে এখন আমরা আমেরিকার ইতিহাসের সেই অল্প কয়েকটি তারিখের সাথে যুক্ত করতে পারি যেগুলো কুখ্যাত হয়ে থাকবে।”

সহিংসতায় এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় শোকও জানিয়েছেন তিনি।

“এটি আমাদের গণতন্ত্রের উপর এমন একটি দাগ যা ধোয়ার পরও সহজে যাবে না। ৪৫তম প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ, ভয়াবহ এবং লাগামহীন শাসনের উদাহরণ- সন্দেহাতীতভাবে তিনি ছিলেন সবচেয়ে নিকৃষ্ট।”

শুমার বলেন, এই হামলাকারীদের বিক্ষোভকারী বলা যায় না। তারা “অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী” যারা “আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করে না।”

এদিকে ক্যাপিটলে সহিংসতার জের ধরে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সারাহ ম্যাথিউ পদত্যাগ করেছেন।

“ট্রাম্প প্রশাসনের সেবা করার সুযোগ আমার জন্য সম্মানের ছিল এবং যে নীতি আমরা বাস্তবায়ন করেছি সেগুলোর জন্যও আমি গর্বিত,” তিনি বলেন।

“কংগ্রেসের হলে যেহেতু আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে তাই আজ আমাকে যা দেখতে হয়েছে তার জন্য আমি খুব বিরক্ত।”

ম্যাথিউ জানিয়েছেন যে তার পদত্যাগ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। সেই সাথে তিনি বলেন যে, “আমাদের দেশে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর দরকার।”

এর আগে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ এবং ট্রাম্পের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি স্টিফানি গ্রিশাম এই হট্টগোলের মধ্যেই পদত্যাগ করেন। কিন্তু ক্যাপিটলের উপর হামলার সাথে এর কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কী ঘটেছিল?
আমেরিকার আইন-প্রণেতারা যখন নভেম্বরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক তখন আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটল-এ ঢুকে পড়ে।

কয়েক ঘণ্টা ভবন কার্যত দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে।

রাজধানী ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু সান্ধ্য আইন শুরু হবার পরও শত শত বিক্ষোভকারীকে রাজপথে জটলা পাকাতে দেখা গেছে।

দুপুরের পরই আমেরিকার রাজধানীতে নাটকীয় দৃশ্যে দেখা যায় – শত শত বিক্ষোভকারী ভবনটিতে ঢুকে পড়ছে আর পুলিশ কংগ্রেস সদস্যদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!