একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে অনেক সময়ই মতান্তর হয়। আবার ঝগড়াও বাধে। বলিউডও তার ব্যতিক্রম নয়। নায়কে-নায়কে কিংবা দুই নায়িকা, আবার কখনও নায়ক-নায়িকার মন কষাকষি— এমন খবর হরহামেশাই শোনা যায়।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বলিপাড়ার তেমনি এক ঝামেলা বেঁধেছিল আমির খান ও সেই সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী দিব্যা ভারতীর মধ্যে। তখন নায়ক হিসেবে আমিরের ‘চকোলেট বয়’ ভাবমূর্তি ঘিরে পাগল দেশের লাখো লাখো ভক্ত- অনুরাগী। আর নায়িকাদের মধ্যে তখন ঝড় তুলেছিলেন মাত্র ১৬ বছরের দিব্যা।
অল্প সময়ের মধ্যেই বলিপাড়ায় নিজের ভিত শক্ত করেছিলেন দিব্যা। একের পর এক নায়কের সঙ্গে কাজ করছিলেন। সেই সময়ই আমিরের সঙ্গে মন কষাকষি হয়েছিল দিব্যার। আর সে কারণে শৌচালয়ে বসে কেঁদে ভাসিয়েছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু কী ঘরেছিল?
এ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, ১৯৯২ সালে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন বলি তারকারা। তাদের মধ্যে ছিলেন আমির ও দিব্যা। কিন্তু সেই শো করতে গিয়েই যত কাণ্ড ঘটে।
শোনা যায়, দিব্যার সঙ্গে একমঞ্চে একসঙ্গে নাচ করতে চাননি আমির। যার জেরে ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেত্রী। শোনা যায়, পারফরম্যান্সের মহড়ার সময় নাচের ‘স্টেপ’ ঠিক করছিলেন না দিব্যা। আর সেই কারণেই বেজায় চটেন আমির। তার ব্যবহারে দিব্যা এতটাই আঘাত পান যে, কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে বাথরুমে বসে অঝোরে কেঁদেছিলেন নায়িকা।
এই প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে দিব্যা বলেছিলেন, ‘তার আচরণ খুবই খারাপ লেগেছিল। তিনি সিনিয়র। যদি আমরা জুনিয়ররা ভুল করি, তা হলে আমাদের বাদ দিয়ে দেয়া হবে! তার উচিত ছিল সঠিক নাচের স্টেপ দেখিয়ে দেয়া। সিনিয়র হিসাবে আমার ভুলটা ধরিয়ে দিতে পারতেন। সিনিয়র হিসাবে আচরণ করা উচিত ছিল তার, একজন তারকা হিসাবে নয়।’
ওই শোয়ের এক আয়োজক কর্তা দিব্যাকে জানিয়েছিলেন যে, আমিরকে নাকি উপেক্ষা করেছিলেন দিব্যা। আর সেই কারণেই নাকি গোসা হয়েছিল আমিরের। দিব্যা বলেছিলেন, ‘আমি তাকে ‘হ্যালো স্যর’ বলে সম্বোধন করেছিলাম। আমি অবজ্ঞা করিনি।’
সেই সময় দিব্যাকে সাহায্য করেছিলেন সালমান খান। তিনিই সেই সময় পরিস্থিতি সামলান। পরে তারা একসঙ্গে পারফর্মও করেন।
তবে লন্ডনের সেই শোয়ে আমির ও দিব্যার তিক্ততার রেশ অনেক দিন ধরেই বজায় ছিল। দেশে ফিরেও নায়ক-নায়িকার মধ্যে সম্পর্কে শৈত্য চলছিল। তার আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল ১৯৯৩ সালে।
ওই বছর মুক্তি পেয়েছিল যশ চোপড়ার ‘ডর’। যে সিনেমায় ধূসর চরিত্রে অভিনয় করে বলিউডে নতুন ইনিংস শুরু করেছিলেন শাহরুখ। সেই সঙ্গে শাহরুখ-জুহির পর্দার প্রেমও হৃদয় ছুঁয়েছিল দর্শকদের।
তবে ওই সুপারহিট সিনেমার জন্য প্রথমে নায়িকার চরিত্রে দিব্যাকে ভাবা হয়েছিল। শাহরুখের চরিত্রে ভাবা হয়েছিল আমিরকে। ওই ছবিতে দ্বিতীয় নায়ক হিসাবে অভিনয় করেছিলেন সানি দেওল। অর্থাৎ আমির, সানি এবং দিব্যাকে নিয়ে প্রথমে ‘ডর’ সিনেমার কথা ভাবা হয়েছিল।
তবে সিনেমাতে সই করার সময় নায়িকা হিসাবে দিব্যার পরিবর্তে জুহি চাওলাকে চেয়েছিলেন আমির। আর সানি চেয়েছিলেন দিব্যাকে।
সেই সময় যশ চোপড়ার সঙ্গে ‘পরম্পরা’ সিনেমায় অভিনয় করছিলেন আমির। দিব্যার মা মিতা ভারতী অভিযোগ করেছিলেন যে, আমিরই জোর করে সিনেমা থেকে দিব্যাকে সরান।
তবে সেই সময় রটে গিয়েছিল যে, দিব্যার সঙ্গে নাকি যশ চোপড়ার সম্পর্ক ভাল ছিল না। তাই তাকে বাদ দেয়া হয়েছিল। তবে পরে এক সাক্ষাৎকারে দিব্যার মা দাবি করেছিলেন যে, আমিরই কলকাঠি নেড়ে দিব্যাকে বাদ দেন।
পরে অবশ্য ওই সিনেমা থেকে সরে যান আমিরও। তার পরিবর্তে শাহরুখকে নেয়া হয়। আর তার পর বাকিটা তো ইতিহাস। ‘ডর’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে নতুন জমানা শুরু করে দেন শাহরুখ।
১৯৯৩ সালে অকালপ্রয়াণ হয় দিব্যার। যে খবরে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল বলিপাড়া। এত বছর পরও আমিরের সঙ্গে দিব্যার সেই তিক্ততার কাহিনি ভুলতে পারেনি বি-টাউন।
খুলনা গেজেট/ এসজেড