দুই দিন আগেও মাঠে মাঠে পাকা আমন ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। আর কয়েক দিন আগে কাটা ধান মাঠে শুকিয়ে আনেকে বাড়িতে আনার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে, কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিপাতে সব কিছুই যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। চৌগাছা উপজেলায় মাঠের পর মাঠ কেটে রাখা আমন ধান পানিতে ভিজে একাকার। হাজারও কৃষকের আরও একটি স্বপ্ন ভঙ্গের পথে, এমনটিই জানালেন ভুক্তভোগী চাষিরা।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে’র প্রভাবে গত শনিবার সকাল থেকেই চৌগাছার আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। এদিন বিকেল থেকেই শুরু হয় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাতের গতি বাড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু, এ খবর লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যহত ছিল। বলাচলে অসময়ের এই বৃষ্টিতে অপুরোনীয় ক্ষতির মুখে হাজারও কৃষক। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ্য আমন ধান চাষিরা।
রবিবার সকালে উপজেলার কুঠিপাড়া, চাঁদপুর, কয়ারপাড়া, সিংহঝুলীসহ বেশ কিছু গ্রাম ও মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে ভিজছে কেটে রাখা ধান, স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে কৃষকের। মাঠে কেটে রাখা ধান জমিতে স্তুপ করে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা চলছে। কোন কোন কৃষক পূর্বে কেটে রাখা ধান জমিতে শুকিয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে এনে ঝাড়ার প্রস্তুতি নেয় কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে ধান ঝাড়া বন্ধ, সেই ধান বাড়ির আঙিনায় গাদা দিয়ে অথবা পলেথিন দিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করছেন। অধিকাংশ কৃষকের ধান এখনও মাঠে, বৃষ্টিপাত যদি অব্যহত থাকে তাহলে ধান বাড়িতে আনতে পারবে কিনা তা নিয়ে শংসয় দেখা দিয়েছে।
কুঠিপাড়া মহল্লার কৃষক হোসেন আলী জানান, কৃষকের স্বপ্ন পুরোন হয় এমন নজির খুবই কম। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করি। আবহাওয়া ভাল থাকায় বাম্পার ফলনের আশা ছিল। ধান বাড়িতে এনে বিক্রি করার পর একটি দেনা পরিশোধ করার চিন্তা করি কিন্তু সেটি হবে কিনা সন্দেহ। যে ভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে ধান বাড়িতে আনাই এখন দুরুহ ব্যাপার। বৃষ্টিপাতের তিনদিন আগে ধান কেটে মাঠে রাখা ছিল। বিচেলি প্রায় শুকিয়ে গেছে, ঠিক সেই সময়ে বৃষ্টি। ধান রক্ষায় পরিবারের সকলেই মাঠে যেয়ে ওই ধান জমিতে স্তুপ করে রেখেছি।
চাঁনপুরের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, তিন বিঘা আমন ধানের চাষ করেছিলাম। ধান বাড়িতে এনে ঝাড়ার প্রস্তুতি কালে বৃষ্টি শুরু। সব ধান বাড়ির আঙিনায় গাদা দিয়ে রেখেছি।
সিংহঝুলী গ্রামের চাষি শাহীনুর রহমান জানান, প্রায় ৯ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়। বৃষ্টির আগে অর্ধেক ধান কেটে বাড়িতে এনে রাখা ছিল। বাকি ধান এখনও মাঠে রয়েছে। বৃষ্টির কারনে বাড়িতে আনা ধান ঝাড়তে পারেনি, তাই পলিথিন দিয়ে শুকনা ধান রক্ষার চেষ্টা করছি আর মাঠের সব ধানই পানিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে।
উপজেলার জগন্নাথপুর, পাশাপোল, সৈয়দপুর, আড়পাড়া, ফুলসারা, নিয়ামতপুরসহ অধিকাংশ গ্রামের চাষিরা পাকা আমন ধান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। কৃষকরা জানান, আমন মৌসুমে ধানের ফলন যাই হোক গো-খাদ্য বিচেলি খুব ভাল হয়। আর আমনের বিচেলি দামও ভাল পাওয়া যায়। সেকারনে সকলেই বিচেলি তৈরীর জন্য পাকা ধান মাঠে কেটে রাখেন। রোদে শুকানোর পার বাড়িতে এনে ধান ঝেড়ে বিচেলি বিক্রি করা হয়। যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এ বছর কোন কিছুই আর হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারনে আমন ধান নিয়ে কৃষক কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিচু জমির আইল কেটে জমি থেকে পানি বের করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টি দীর্ঘ না হলে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/ টি আই