বাজারে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম না বাড়লেও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। গেল সপ্তাহে বন্দরে আটকে থাকা ট্রাক ছাড়ের খবরে খুলনায় পেঁয়াজের দাম কমলেও সম্প্রতি আবারও দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। এদিকে পেঁয়াজের দামের উর্দ্ধগতির লাগাম টানতে সরকার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করলেও তার প্রভাব পড়েনি বাজারে।
নগরীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০টাকা, যা গত ১৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ছিল কেজি প্রতি ৮৫-৯০টাকা। আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকা, যা গত শুক্রবার একই ছিল।
পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৭৫-৮০ টাকা, এখনও সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ যে দামে বিক্রি হয়েছিল সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে ।
আরও পড়ুন :
- খুলনায় পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কমেছে, দাম নিম্নমুখী
- তিন দিনেই ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট!
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে যে পরিমাণ পেঁয়াজের ট্রাক আটকে আছে, সে তুলনায় কম সংখ্যক ট্রাক আমাদের দেশে প্রবেশ করছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ট্রাকগুলো আটকে থাকায় অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। ফলে আমাদের এখন লোকসান গুণতে হচ্ছে। বাজারে ক্রেতা একেবারেই কম। একজন খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, সারা দিনে ২০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারি বাজারে দাম না বাড়লেও খুচরা বাজারে দাম কেন বাড়বে। গেল ১৭ সেপ্টেম্বর স্থল বন্দরগুলোতে আটকে থাকা পেঁয়াজের ট্রাক ছাড়ের খবরে খুলনায় পেঁয়াজের দাম কমতে থাকে। কিন্তু যখন জানা যায় ট্রাক ছাড়ের খবর সঠিক নয়, তখন আবারও দাম বাড়ে। পেঁয়াজের এমন মূল্যবৃদ্ধিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলে তাঁদের অভিযোগ। এছাড়া মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িতদের বিচার না হওয়াকে দায়ী করেছেন তাঁরা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের পরিসরকে তারা পর্যাপ্ত মনে করছেন না। সরকারের মনিটরিংকে আরও জোরদার করা উচিত বলে তাঁদের দাবি।
এছাড়া ট্রেডিং কর্পোরেশান অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সারাদেশের ন্যায় খুলনায় ৫টি ট্রাকের মাধ্যমে খোলাবাজারে পেঁয়াজসহ যেসব নিত্যপণ্য বিক্রি করছে, তার ব্যপ্তি আরও বাড়ানোর কথা বলেন ক্রেতারা। তাঁরা বলেন, খুলনার মত বিভাগীয় শহরে ৫ টি ট্রাক থেকে পেঁয়াজ বিক্রি ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। ট্রাকের সংখ্যা ১৫-২০ টি করার কথা বলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন :
- রাতের ব্যবধানে খুলনায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৫-৪০ টাকা
- খুলনায় ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রেডিং কর্পোরেশান অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খুলনার উপ-উর্দ্ধতন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে খুলনায় ৫ টি ট্রাকের মাধ্যমে খোলা বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতারা ভিড়ও করছেন। ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানোর দাবির বিষয়ে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানান।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)’র পেঁয়াজ এখন অনলাইনে ঘরে বসেই কেনা যাচ্ছে। প্রতি কেজির দাম ৩৬ টাকা। একজন গ্রাহক একবারে তিন কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। একবারে সরবরাহ বা ডেলিভারি চার্জ বাবদ সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নিতে পারবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।
এদিকে ভারতের বিকল্প দেশগুলো থেকে পৌনে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চলতি মাসে প্রথম ২০ দিনে এসব পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন তাঁরা। এত কম সময়ে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহে এটি রেকর্ড বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আগামী মাসের শুরু থেকে এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন :
- খুলনাসহ সারাদেশে রবিবার থেকে ৩০ টাকা দরে টিসিবি’র পেঁয়াজ
- সিন্ডিকেটের কারসাজি, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
এছাড়া সরকার পেঁয়াজ আমদানিতে আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।
খুলনা গেজেট /এমএম