খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

আদালতে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন ‘কথিত’ স্ত্রী জান্নাত আরা

গেজেট ডেস্ক

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ‘কথিত’ স্ত্রী জান্নাত আরা ওরফে ঝর্ণা’র দায়ের করা ধর্ষণের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে বুধবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পৌনে দুই ঘণ্টা এই সাক্ষ্য দেন জান্নাত আরা।

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বাদী জান্নাত আরাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এর আগে সকাল ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গাজীপুর জেলার কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়।

আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ–আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্ বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের দূরত্ব তৈরি হলে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের এই মামলা করা হয়। বাদীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও তিনি রাজি হননি। সেখানে তিনি ডাক্তারের কাছে বলেছেন, কলেমা পড়ে মামুনুল হকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছে। তবে তাঁর অনুমতি ছাড়াই ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘জান্নাত আরা বলেছেন, মামুনুল হক তাঁকে কলেমা পড়ে শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করেছেন। মামুনুল হকের কথায় তিনি ঢাকায় এসেছেন। তিনি এই শারীরিক সর্ম্পকের কথা কাউকে বলেননি। জেরায় বাদী অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সফলতা পেতে পারি।’

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের একটি রুমে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জান্নাত আরাকে ধর্ষণ করেন মামুনুল হক। এর আগে দুই বছর ধরে তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করছিলেন আসামি। আদালতে বাদী আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বারবার প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, মামুনুল হকের স্ত্রী জান্নাত আরা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাদীকে ৪১ বার প্রশ্ন করে জেরা করেছেন, কিন্তু বাদী প্রতিবার বলেছেন, তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। জেরাকালে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামুনুল হকের স্ত্রী জান্নাত আরা—এটা প্রমাণ করতে পারেননি। এই মামলার ৪৩ সাক্ষীর মধ্যে মামলার বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আদালত পরবর্তী সময়ে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ দেবেন।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, সকালে কড়া নিরাপত্তায় গাজীপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাঁকে আবার গাজীপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোহসীন মিয়া। তাঁকে সহায়তা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন আইনজীবী।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে মামুনুল হককে নারীসহ অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় খবর পেয়ে হেফাজত ও মাদ্রাসার ছাত্ররা ওই রিসোর্টে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে তাঁকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। পরে হেফাজতের নেতা–কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভাঙচুর চালান। এ সময় তাঁরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেন। ভাঙচুর করেন শতাধিক যানবাহন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন। পুলিশ গিয়ে তাঁদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে হেফাজতের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ চার শতাধিক শর্টগান ও টিয়ারশেল ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় হেফাজতকর্মী মোহাম্মদ ফয়সাল বাদী হয়ে মামুনুল হককে হেনস্তা করার অভিযোগে যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোনারগাঁয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।

নারীসহ সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে মামুনুল হককে অবরুদ্ধ ও সহিংস ঘটনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টি এম মোশাররফ হোসেনকে বদলি করা হয়। এর আগে ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

রয়েল রিসোর্ট কাণ্ডের ২৭ দিন পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। ১০ সেপ্টেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে জান্নাত আরাকে ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে জান্নাত আরার দায়ের করা ধর্ষণের মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!