নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নির্যাতিত সেই নারী আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। সোমবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (আমলি আদালত-৩) বিচারক মাশফিকুল হকের কাছে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন।
রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পরিদর্শক নাজমুল হক। তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বেগমগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তক আহমেদ বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক বাদীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।’
এর আগে সন্ধ্যায় ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালের দুই মামলায় আসামি মো. রহিম ও রহমত উল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রত্যেক আসামির দুই মামলায় তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে ভুক্তভোগী নারী (৩৭) মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। ঘটনার ৩২ দিন পর রোববার ওই নারী বেগমগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে, অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুই মামলাতেই নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- বাদল, মো. রহিম, আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্যা। তাঁদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রহিম ও রহমত উল্লাহকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনকে (২৬) অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরে তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, মামলার প্রধান আসামি নুর হোসেন ওরফে বাদলকেও (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও এই মামলায় আসামি হিসেবে দেলোয়ারের নাম নেই।
সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র্যাব-১১-এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘রোববার গভীর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল এলাকায় একটি বাসে অভিযান চালিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে রাতেই বাদলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব-১১ অধিনায়ক আরো জানান, বাদলকে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে আর দেলোয়ারকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হবে। রাতে র্যাবের পক্ষ থেকে খুদেবার্তায় জানানো হয়, প্রধান আসামি দেলোয়ারের মাছের খামার থেকে সাতটি তাজা ককটেল, দুটি ১২ বোরের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনাটি আজ হাইকোর্টের নজরে আনার পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ ঘটনাটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা ভিডিও ফুটেজ সরাতে নির্দেশ দিয়েছেন। সিডি বা পেনড্রাইভে কপি রেখে দিয়ে ফুটেজটি সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দিয়েছেন আদালত। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটিতে রয়েছেন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ। ঘটনা অনুসন্ধান করে তাঁদের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি ওই ঘটনায় করা ফৌজদারি মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে ২৮ অক্টোবর আদালতকে প্রতিবেদন দিতে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রুলে ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে বেগমগঞ্জ থানার ওসি ও বেগমগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
খুলনা গেজেট / এমএম