খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯০
  কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাসা থেকে ২ সন্তানসহ বাবা-মায়ের মরদেহ উদ্ধার
  কুমিল্লায় অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ৭

আকষ্মিক উত্থান, সাধারণ থেকে দাপুটে আনছারউদ্দিন

একরামুল হোসেন লিপু

এক সময়ে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। ছিলেন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার লাখোয়াটীর প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। আর সেখান থেকেই আকষ্মিক উত্থান! হয়েছিলেন বারাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের  সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক। চার বাড়ি খ্যাত প্রয়াত শেখ ইকরাম হোসেনের বড় ছেলে এক সময় জড়িয়ে পড়েন দ্বন্দ্বে। প্রভাব আর প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়ান বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গাজী জাকির হোসেনের পরিবারের সাথে। শুরু হয় সংঘাত রক্তপাত। ইউপি নির্বাচন, বাজার কমিটির নির্বাচন সব দ্বন্দ্বেইে উঠে আসে তাঁর নাম। এসব দ্বন্দ্ব আর রক্তপাতে সর্বশেষ শুক্রবার (২৪ মার্চ) প্রকাশ্য দিবালোকে খানজাহান আলী থানার শিরোমণি লিন্ডা ক্লিনিকের সামনে  দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন তিনি। তিনি শেখ আনছারউদ্দিন। দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গাজী জাকির হোসেন হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। খুলনা গেজেটের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সাধারণ থেকে দাপুটে শেখ আনছারউদ্দিনের আদ্যপান্থ।

নির্বাচনী প্রচারণাকালে শেখ আনছারউদ্দিন -ফাইল ছবি

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ আনছারউদ্দিনের জন্ম ও বেড়ে উঠা দিঘলিয়া উপজেলার  বারাকপুর ইউনিয়নের লাখোয়াটী গ্রামে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক  অবসর গ্রহণ করার পর এলাকার স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ কমিটির পরিচালনা পর্ষদসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে সম্পৃত্ত করেন। লাখোয়াটী চার বাড়ি খ্যাত তাঁর বংশের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এ বাড়ি ঘিরে বারকপুর ইউনিয়নের ভোটার ৭ শতাধিক ভোটার। আর সুযোগে রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না থেকেও এক সময় বারাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের  সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন।

২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বারাকপুর বাজার কমিটির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে প্রকাশ্য হয় শেখ আনছারউদ্দিন দাপুটে রূপ। প্রভাব ও প্রতিপত্তি জাহির করে একই বছর (২০২০)  ১৭ মার্চ করোনাকালীন সময়ে বারাকপুর বাজারে চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনকে লাঞ্ছিত করার মধ্য দিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন। একই দিন তিনি ও তাঁর সমর্থকরা হামলা করে গাজী জাকির হোসেনের বাড়িতে। আক্রমণের শিকার হন গাজী জাকির হোসেনের বড় ভাই বারাকপুর বাজার কমিটির সভাপতি গাজী নাসির উদ্দিন। পিটিয়ে তাঁর হাত ভেঙ্গে দেওয়া হয়। বারাকপুর বাজারে হামলার শিকার হন গাজী জাকির হোসেনের বেশ কয়েকজন সমর্থকও। বারাকপুর বাজার, গাজী জাকির হোসেনের বাড়ি, সমর্থক ও তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভয়ঙ্কর ও আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি মধ্যে নিজের অস্তিত ঘোষণা দেন শেখ আনসার। এরপর আর পিছিয়ে থাকেনি শেখ আনছার ও তাঁর সহযোগীদের শক্তি প্রদর্শন। ধীরে ধীরে অশান্ত হতে শুরু করে বারাকপুর ইউনিয়ন। গেল আড়াই বছরে নিহত গাজী জাকির হোসেনের সমর্থক ও তাঁর সমর্থকদের একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হন চেয়ারম্যান গাজী জাকির।

অপরদিকে চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনও তাঁর নানাবিধ ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডে এলাকায় ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত ছিলেন। ২০২২ সালের ১২ জুন তিনি নৃশংস হামলার শিকার হন। দীর্ঘ চিকিৎসার পর ৩ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ  করেন। এ হত্যা ঘটনায় উঠে আসে শেখ আনছারউদ্দিনের নাম। শুধু তাই নয়, হত্যা মামলায় তাঁর সরাসরি সম্পৃক্তার অভিযোগ করে নিহত জাকিরের পরিবার।

২০২১সালের ২০ সেপ্টেম্বর বারাকপুর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আনছারউদ্দিন। সেই ভোটে মাত্র ৯৮৮ ভোটের ব্যবধানে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গাজী জাকির হোসেনের কাছে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে তিনি ৫ হাজার ৯১৫ ভোট পেয়েছিলেন। বিজয়ী গাজী জাকির হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ৯১৫ ভোট পেয়েছিলেন। এছাড়া সন্ত্রাসী হামলায় নিহত  ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গাজী জাকির হোসেন নিহত হওয়ার পর  ২০২২ সালের ২ নভেম্বর উপ- নির্বাচনে শেখ আনছারউদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও ঋণ খেলাপির অভিযোগে তার প্রার্থীতা বাতিল হয়। প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর থেকে তিনি মূলত বারাকপুরের ভৈরবের অপর প্রান্ত খানজাহান আলী থানার  শিরোমনি এলকায় বসবাস করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র  ও এক কন্যা সন্তানের বাবা আনসার উদ্দিন সেখানেই থাকতেন।

দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ রিপন কুমার সরকার খুলনা গেজেটকে বলেন, বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গাজী জাকির হোসেন  হত্যাসহ শেখ আনছারউদ্দিনের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় ৭ টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো থেকে তিনি জামিনে ছিলেন।

তিনি বলেন,  দুর্বৃত্তের গুলিতে শেখ আনছারউদ্দিন নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাখোয়াটী ও বারাকপুর বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।  এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা  ‍শুক্রবার রাতে জানান, তারা ইতিমধ্যে হত্যা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। পূর্ব শক্রতা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবহার করা হতে পারে ভাড়াটিয়া হত্যাকারীদের। নানা বিষয় মাথায় রেখে হত্যা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনই নিদিষ্ট করে কিছু বলার সময় হয়নি।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!