ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে এবং দুই বছর আগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের নামে লুটপাট ও ডাকাতির অভিযোগে সাবেক মহাপুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদসহ ১৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় দুটি অভিযোগ করেছে বিএনপি। বুধবার সকালে পল্টন মডেল থানায় বিএনপির ‘মামলা তথ্য ও সংরক্ষণ’-বিষয়ক কর্মকর্তা সালাহ উদ্দীন খান বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। অভিযোগগুলো গ্রহণ করেছেন থানার ওসি সেন্টু মিয়া।
সালাহ উদ্দীন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা জানেন, ২০০৯ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ অফিসাররা অনেক মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, হয়রানি করেছেন, আমাদের গুম করেছেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের একটি ঘটনা নিয়ে এসেছি। হারুন অর রশীদ, মেহেদি হাসান, বিপ্লব কুমার প্রমুখ আমাদের অফিসের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে অফিসের সব মালামাল নিয়ে যান। প্রায় ৪৭ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতি করেছেন। আর ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল নষ্ট করেছেন। সে-সংক্রান্ত একটা মামলার অভিযোগ আজ আমরা এখানে এফআইআর করে জমা দিয়েছি।’
তিনি জানান, ‘দ্বিতীয়টা ১৬ জুলাই। সেদিন ডিবির হারুন অর রশীদ ডিএমপির মেহেদি হাসান, বিপ্লব কুমার দাস প্রমুখ অস্ত্র তৈরি করার হাতিয়ারসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কক্ষে রাখেন, তৃতীয়তলায় অবৈধ বোমা রাখেন। একটা নাটক সাজিয়ে তারা বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যান। তার একটি অভিযোগ নিয়ে আমরা এসেছি। আমরা ডিউটি অফিসার এসআই মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে ওসি সেন্টু মিয়া অভিযোগগুলো গ্রহণ করেছেন। মামলা নম্বর ১ এবং ২।’
মামলার বিবাদীরা হলেন পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দাপ্রধান) হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম, হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেররিজম) আসাদুজ্জামান, যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) খন্দকার নুরন্নবী, সনজিত কুমার রায়, যুগ্ম পুলিশ কমিশার (ডিএমপি) বিপ্লব কুমার দাস, মেহেদি হাসান, উপপুলিশ কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) তারিক বিন রশিদ, উপপুলিশ কমিশনার (মতিঝিল জোন) হায়াতুল ইসলাম খান, এডিসি (সোয়াট টিম) জাহিদুল ইসলাম, এসি (মতিঝিল জোন) গোলাম রুহানী, পল্টন মডেল থানার ওসি মো. সালাহউদ্দিন মিয়া ও এসআই (পল্টন মডেল থানা) মিজানুর রহমান।
ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ ঢুকে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডাকাতি যাওয়া মালামালের মূল্য ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং এতে ক্ষতির পরিমাণ ৩ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। পুলিশপ্রধানসহ ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়।
আরেকটি অভিযোগে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সাদা পোশাকে সদস্যরা নয়াপল্টনের অফিসে ঢুকে এবং বাইরে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা অস্ত্র-গোলাবারুদ, বাঁশের লাঠিসোঁটা, রড, পিস্তল নিয়ে মহড়া দেন। তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তছনছ এবং অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র রেখে দেন। তারা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ মহানগর নেতাদের আসামি করে মিথ্যা মামলা করেন।
এ অভিযোগে হারুন অর রশীদ ছাড়াও ডিএমপির ১৬ জন কর্মকর্তার নাম দেওয়া হয়। তারা হলেন উপপুলিশ কমিশনার মো. মহিদ কবির সেরনিয়াবাত, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আফসার উদ্দিন খান, সাইফুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ কমিশনার এরশাদুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) কবির হোসেন চৌধুরী, এসআই মনিরুজ্জামান, নুরুল ইসলাম, ফরমান আলী, এএসআই স্বপন মিয়া, রেজাউল করীম, এরশাদ আলী, রবিউল ইসলাম, ইব্রাহিম শেখ, কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম, খোরশেদ আলম ও মেহেদি হাসান মাসুদ।
অভিযোগ দেওয়ার সময় সাবেক ছাত্রনেতা শরীফুল ইসলাম শাওন, তারেক আহমেদ, মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এইচ