একসময় পর্দা দাপিয়ে বেড়ানো প্রবীর মিত্র এখন রয়েছে একেবারে লোকচক্ষুর আড়ালে। তাকে সহজেই দেখা মেলে না কোথাও। ঘরবন্দি হয়েই তার কাটে দিন।
জানা যায়, প্রবীর মিত্র এখন ভালোভাবে কানে শুনতে পান না। তবে তার কাছে গিয়ে যদি কেউ জোর গলায় কথা বলে তাহলে তিনি শুনতে পান। এ ছাড়া হাঁটুর ব্যথার জন্য ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না খ্যাতিমান এই অভিনয়শিল্পী।
৮১ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান অভিনেতার বর্তমান অবস্থা সংবাদমাধ্যমে তার পুত্রবধূ সোনিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘বাবার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। তবে হাঁটুর ব্যথার জন্য হাঁটতে পারেন না। মাঝেমধ্যে ব্যথা বেড়ে যায়। তখন আবার ডাক্তারের কাছে নিতে হয়।’
সিনেমা দিয়ে যশ, খ্যাতি পেলেও এখন সিনেমার প্রতি তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। সিনেমা নিয়ে কথা বলা তো দূরে থাক, ঘরে বসে টেলিভিশনেও দেখেন না। ঘরের সদস্যদেরও নিষেধ করে দিয়েছেন, যেন তার সঙ্গে সিনেমা নিয়ে কোনো কথা না বলে।
গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রবীর মিত্রর। করোনামুক্ত হলেও বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন এ অভিনেতা। সিনেমা জগতের মানুষ তেমন খোঁজখবরও নেয় না তার।
এখন প্রবীর মিত্রের সময় কাটে বই পড়ে, টেলিভিশনে খেলা ও সংবাদ দেখে। বিশেষ দিবসে সিনেমা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কিছু উপহার আসে। এ ছাড়া কেউ খোঁজ নেয় না। সেই আশাও ছেড়ে দিয়েছেন অভিনেতা।
তৎকালীন তিতাস একটি নদীর নাম, তীর ভাঙা ঢেউ, অভাগী বড় ভালো লোক ছিল, জন্ম থেকে জ্বলছি, নবাব সিরাজউদ্দৌলা থেকে শুরু করে আজকের আকাশছোঁয়া ভালবাসা, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায়না, দেবদাস, বলো না তুমি আমার, দেহরক্ষী, সুইটহার্ট, সর্বশেষ প্রেমী ও প্রেমীসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের অভিনেতা প্রবীর মিত্র।
স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন প্রবীর মিত্র। পরবর্তীতে পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ নামে একটি চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েছে বড়পর্দায় তার অভিষেক হয়। মূলত এ ছবিতে কাজের ব্যাপারে তার বন্ধু এটিএম শামসুজ্জামানই তাকে সহযোগিতা করেছিলেন।
১৯৪০ সালে চাঁদপুর শহরে এক কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বংশপরম্পরায় পুরনো ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা প্রবীর মিত্র। তিনি ঢাকা শহরেই বেড়ে উঠেন৷ প্রথম জীবনে সেন্ট গ্রেগরি থেকে পোগজ স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজন্তা মিত্র ২০০০ সালে মারা গেছেন। তার এক মেয়ে তিন ছেলে। ছোট ছেলে ২০১২ সালে ৭ মে মারা গেছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই