খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় লবনাক্ততার মধ্যে সাফল্য আসায় কৃষকদের অসময়ের (অফসিজন) তরমুজ চাষে ব্যাপক আগ্রহ বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় আবাদ বেড়েছে ৮ গুণ। চলতি মৌসূমে ৬০ জন কৃষক ঘেরের পাড়ে মাচা তৈরি করে অফসিজন তরমুজ চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন।
কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ও বাগালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মৎস্যঘেরের ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। সেই মাচার নিচে নানা রংয়ের সারি সারি তরমুজ ঝুলে আছে। তরমুজগুলো নেটের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। হলুদ রংয়ের পাশাপাশি রয়েছে গায়ে ডোরাকাটা দাগ ও কালচে-সবুজ রংয়ের তরমুজ। ঘেরের মধ্যে ধান রোপন করা হয়েছে। ঘেরের পাড়ে তরমুজের পাশাপাশি করোল্লা, ধুন্দল, ঝিঞে ও বেগুন লাগানো হয়েছে। আর ঘেরে রয়েছে গলদা চিংড়িসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ।
বাগালী ইউনিয়নের ইসলামপুরে প্রগতিশীল চাষী তাওহিদুর রহমান জানান, দৌলতপুর কৃষি কলেজ থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে চাকরির পিছনে না ছুটে কৃষি কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তার পিতাও একজন কৃষক। ২০২০ সালে তিনি দুই বিঘা জমিতে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ শুরু করেন। ঘেরের পাড়ে প্রথম বছর তরমুজ এবং মিষ্টি কুমড়া রোপন করেন। ফলন ভালো হওয়ায় পরের বছর ঘের বর্ধিত করেন। তিনি বলেন, চলতি বছর চার বিঘা জমিতে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। নাম্বার কিং, নাম্বার ওয়ান, থাইল্যান্ড টু জাতের তরমুজ চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার দেওয়ার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে সহয়তা করছে। এ বছর সাড়ে চার লক্ষ টাকার মাছ ও ফসল পাবেন বলে আশা করছেন।
একইভাবে বাগালী ইউনিয়নের উলার বিল ও বগার বিলের ২০ বিঘা মৎস্যঘেরের ওপর মাচা তৈরি করে অসময়ে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ চাষ করেছেন মোশাররফ হোসেন, বিল্লাল হোসেন ও সাবিনা খাতুনসহ কয়েকজন কৃষক।
বগা বিলের চাষি বিল্লাল হোসেন বলেন, দুই বছর অফসিজন তরমুজ চাষ করছি। ভালো ফলন ও দাম পাচ্ছি। প্রতি কেজি তরমুজ ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পাশবর্তী কয়রা খালে লবন পানি থাকায় আমাদের চাষাবাদে ক্ষতি হচ্ছে। রাস্তা চুকিয়ে ও ছাপিয়ে আমাদের ঘেরে লবন পানির অনুপ্রবেশ ঘটে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, কয়রা উপজেলায় এবছর ৬০ জন কৃষক ৮ হেক্টর জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ করেছেন। ইসলামপুর, দেয়াড়া, মহারাজপুর, কালিকাপুর, মহেশ্বরীপুর, সাতহালিয়া, বড়বাড়িয়া, উত্তর বেদকাশিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। গত বছর এক হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলক চাষের মাধ্যমে এ উপজেলায় অফসিজন তরমুজ চাষ শুরু হয়। ওই এক হেক্টর জমিতে ৩৫ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, চাষীদের সফলতা উপকূলে অফসিজন তরমুজ চাষের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। অসময়ে তরমুজের চাহিদা থাকায় ও দাম ভালো পাওয়ায় মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষে এলাকার কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। চাষীদের প্রদর্শনী ও বীজ সহায়তা করা হয়েছে। অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে করেছে। হেক্টর প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মেট্রিকটন উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা করছেন।
খুলনা গেজেট/কেডি