দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করছে একটি চক্র। পরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে তারা। তাদের সঙ্গে জড়িত আছেন বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
মাহবুব হোসেন বলেন, এ অনিয়মের সঙ্গে কিছু মানি এক্সচেঞ্জারও জড়িত। ফলে প্রতিদিন শত কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুদকের এনফোর্সমেন্ট অভিযানে সংগঠিত চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, দেশে ফেরা প্রবাসী শ্রমিকরা রেমিট্যান্স নিয়ে বিমানবন্দরে নামেন। ব্যাংকের টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে তা কেনেন ব্যাংকাররা। কিন্তু সেটা ব্যাংকে জমা রাখেন না তারা। বিদেশে পাচার করে দেন। আবার অনেকে নিজেরাই বাজারজাত করেন। ফলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে তা জমা হয় না। দেশ সেটা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে অর্থনৈতিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ওই দিন দুদক উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য পেয়ে এ অভিযান চালানো হয়। দুদক সচিব বলেন, এসময় বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারদের সংগঠিত চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মজীবী ও ভ্রমণকারী বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন। বিমানবন্দরে ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জারে বৈদেশিক মুদ্রা টাকায় পরিবর্তন করেন তারা।
মাহবুব হোসেন বলেন, নিয়মানুযায়ী ‘ফরেন কারেন্সি এনকেশমেন্ট ভাউচার’ দিতে হয়। কিন্তু তা না দিয়ে প্রবাসী শ্রমিক ও ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে সরাসরি বিদেশি মুদ্রা গ্রহণ করেন ব্যাংকার ও মানি এক্সচেঞ্জাররা। বিনিময়ে তাদের টাকা দিয়ে দেন তারা। অভিযানে বিমানবন্দরে অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রায় ক্রয়-বিক্রয় এবং মানি লন্ডারিংয়ে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক এবং এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইম্পিরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রমাণ মেলে।
তিনি বলেন, এ অনিয়মে দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। অবৈধভাবে ক্রয় করা ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার এবং অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করেন জড়িত ব্যক্তিরা। পরে কালোবাজারি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীদের সরবরাহ করেন তারা।
খুলনা গেজেট/কেডি